প্রকাশিত: Fri, Dec 16, 2022 3:53 PM
আপডেট: Sun, Jun 22, 2025 11:21 AM

সংঘাত এড়াতে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ তৈরি করার দায় কার?

দীপক চৌধুরী

সোশ্যাল মিডিয়ায় অপছন্দের মানুষ সম্পর্কে কুৎসা রটানো হচ্ছে দীর্ঘদিন থেকে। সরকারের ভালো কাজের বিরুদ্ধেও কুৎসা। পদ্মাসেতু, মেট্রোরেল, ফ্লাইওভার সম্পর্কে কুৎসা দীর্ঘদিনের। এগুলো পরিকল্পিত। কোনো কোনো রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতাদের সম্পর্কে মিথ্যা ও বিভ্রান্তিমূলক কুৎসা রটানো হচ্ছে। এখন বিএনপি বিভিন্ন দেশের ক’টনীতিকদের চিঠি দিয়ে জানিয়েয়েছে, ১০ ডিসেম্বর কী রকম নৃশংসতা চালানো হয়েছে নেতাদের ওপর এবং দলের অফিস থেকে কীভাবে মূল্যবান মালামাল লুট হয়েছে। এগুলো কী রাজনৈতিক বৈশিষ্ট্য বা চরিত্র হতে পারে এ প্রশ্নও উঠেছে। ২০০২, ২০০৩, ২০০৪ খ্রিস্টাব্দে জামায়াত-বিএনপি জোট সরকার ক্ষমতাকালে বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে আওয়ামী লীগ অফিসে কী করা হয়েছিল, কীভাবে তছনচ করা হয়েছিল তা দলটি স্মরণ করতে পারে? সাংবাদিকতার কারণে তাৎক্ষনিকভাবে এসব দৃশ্য পর্যবেক্ষণ করা ও সরেজমিনে দেখার সুযোগ হয়েছিল। বুদ্ধিজীবী, অধ্যাপক, কবি, প্রগতিশীল নেতা আর আওয়ামী লীগ নেতাদের ওপর নৃশংসতা ও নিষ্ঠুরতা কাকে বলে তা দেখানো হয়েছে। আর জল্লাদি আচরণ কাকে বলে তা দেখা গেছে সেসব সময়। আওয়ামী লীগের পক্ষে ওকালতি করছি না, এটাই ছিলো  বাস্তবতা। 

আওয়ামী লীগ ২০০২ এর অক্টোবরে একটি লিফলেট প্রচার করেছিলো এবং প্রথম আলোসহ সকল পত্রিকায় বিজ্ঞাপন আকারে ছাপিয়েছিল। হত্যা, নির্যাতন, ধর্ষণ, লুণ্ঠন, চাঁদাবাজি কোন পর্যায়ে গিয়ে দাঁড়িয়েছিল এর বিবরণ শুনলে গা শিউরে ওঠে। লিফলেটের বিবরণ অনুযায়ী শুধু এক বছরে ২৪ হাজার, ১২৩ জন হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছিল। ধর্মীয় সংখ্যালঘু নির্যাতন করা হয়েছিল ১ লাখ, ১৬ হাজার ৪,৪৬ জন। এখন স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি ও মহল-বিশেষের প্ররোচণায় গভীর চক্রান্তের অংশ হিসেবেই নানা ধরনের মিথ্যাচার অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। কিন্তু অ্যাকশন নেওয়া যাবে না কেন? কেন আইনানুগ কোনো ব্যবস্থা নেওয়া যাবে না? সংশ্লিষ্টদের কাছে জানতে চেয়েছিলাম এ বিষয়ে। সংশ্লিষ্টরা জানান, ‘দেশের বাইরে থেকে যারা এ ধরনের অপপ্রচার চালাচ্ছে তাদের ধরার সুযোগ নেই। অপপ্রচারকারী ও ষড়যন্ত্রকারীরা যোগ্য, মেধাবী ও ভালো মানুষের বিরুদ্ধে, সরকারের বিরুদ্ধে এ চক্রান্ত করেছে এবং করে চলছে।’ 

নীলনকশা বাস্তবায়নের সক্রিয় সদস্যরা দেশের বাইরে থেকে এভাবে অপকর্ম করবে আর ব্যবস্থা নেওয়া হবে না? সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভ্রান্তিকর, মানহানিকর তথ্য ছাড়াও উসকানিমূলক বক্তব্য দিয়েই যাবে?  এমনই এক প্রশ্ন রেখেছিলাম আওয়ামী লীগের একাধিক প্রবীণ রাজনীতিবিদের কাছে। তারা বলেছেন, বিদেশে থেকে দেশের বিরুদ্ধে অপপ্রচারকারীদের পাসপোর্ট বাতিল হতে পারে। গতবছর আইন-শৃঙ্খলা সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির সভায় সেই সিদ্ধান্তই হয়েছে। চিহ্নিত কয়েকজন আছে যারা ক্রমাগতভাবে অপপ্রচার ও গুজব ছড়াচ্ছে। বিশেষ করে ওরা ইংল্যান্ড, অস্ট্রিয়া, ফ্রান্স, যুক্তরাষ্ট্র, কাতার, আবুধাবী, মালয়েশিয়াসহ কয়েকটি দেশে অবস্থান গুজব ছড়াচ্ছে ও দেশবিরোধী কাজ করে যাচ্ছে। দেশ ও জনগণের স্বার্থে এদের পাসপোর্ট বাতিল করতে হবে। অভিযোগ উঠেছে, বিএনপি নেতারা সমাবেশের নামে সন্ত্রাস ও সহিংসতার উস্কানি দিচ্ছেন। কেউ কেউ আরেকটি যুদ্ধের জন্য প্রস্তুতি নিতে বলছেন, ডাইরেক্ট অ্যাকশনের হুমকি দিচ্ছেন। এতেই প্রমাণ হয়, এসব আত্মবিশ^াস হারানো রাজনৈতিক দলের প্রলাপ ছাড়া আর কিছুই নয়। অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচন চায় যুক্তরাষ্ট্র। এর মানে কী? 

বাংলাদেশ কি চায় না? শান্তিপূর্ণ পরিবেশ চায় যুক্তরাষ্ট্র। ভালো কথা। বাংলাদেশ কী চায় না? বাংলাদেশের জনগণ কী চায় না? কয়েকদিন ধরে দেখছি বাংলাদেশের মানবাধিকার নিয়ে কথা খৈয়ের মতো ফুটছে। অথচ সারাবিশ^ জানে, যুক্তরাষ্ট্রের গুয়ান্তানামো বে একটি কুখ্যাত কারাগার, যেখানে গত একুশ বছর ধরে বন্দিদের বিনা বিচারে আটক রেখে নির্যাতন করা হচ্ছে এবং মানবাধিকারের প্রচণ্ড লঙ্ঘন হচ্ছে। এই কারাগার যে নির্যাতন করার জন্য, সেটি সারা পৃথিবী জানে। অথচ সে দেশটি বাংলাদেশের মানবাধিকার নিয়ে কথা বলে কীভাবে? লেখক : উপসম্পাদক, আমাদের অর্থনীতি, কলামিস্ট ও কথাসাহিত্যিক