প্রকাশিত: Mon, Dec 19, 2022 5:37 AM
আপডেট: Sun, Jun 22, 2025 12:45 PM

‘বিজয় উদযাপন’র সময়টা কবে আসবে?

কাকন রেজা 

অনেক বছর আগের কথা। সংবাদিকতায় তখন তরুণ তুর্কি। বিজয় দিবসের দিনে শিরোনাম লিখলাম, ‘বিজয় দিবস উদযাপিত’। নিউজ এডিটর ‘উদযাপিত’ শব্দটি কেটে দিয়ে লিখলেন, ‘পালিত’। আমি তাকে বললাম, উদযাপনের সঙ্গে যুক্ত আনন্দ, পালনের সাথে যুক্ত থাকে শোকও। বিজয় কি উদযাপনের নয়? আমার প্রশ্নের জবাব দেওয়ার গরজ করলেন না তিনি। সেই তিনি এখন বিশাল মহীরূহ। সম্ভবত তখনকার সেই তরুণ তুর্কিকে তার মনে নেই। অবশ্য না থাকারই কথা, অল্পদিনই তাকে পেয়েছিলাম নিউজ এডিটর হিসেবে। কতদিন পেলাম সেটা কথা নয়, বিজয় তার কাছে উদযাপনের নয় এখনো। তিনি এখনো পালনকে ধরে আছেন। সবকিছুর মাপজোক করেন টাইমমেশিনে চড়ে অতীত ভ্রমণের মাধ্যমে। পঞ্চাশ বছরের সময়ের ফাঁক তার দৃষ্টি এড়িয়ে যায়। মানুষ মেধা-মননে-চিন্তায় যে সময়ের সাথে পরিবর্তিত হয়েছে সেটা তিনি ভুলে যান। তার সব চিন্তাই অতীতমুখী। ভূতের পা যেমন পেছনে চলে তিনি থাকতে চান সেই পেছনেই।

 না, শুধু তিনি নন এমন পেছন চলা অনেকেই রয়েছেন। সংখ্যায় কম হলেও তারা অসম্ভব রকমের ভোকাল। তাদের প্রকট আলাপে কেবল ‘আগে কী সুন্দর দিন কাটাইতাম’ ধরনের স্মৃতিকথা, ভবিষ্যতের কথা সেখানে অনুপস্থিত। এমন পশ্চাৎমুখীতার কারণে আমাদের আজও বিজয় দিবস উদযাপন করা হয় না, পালন করতে হয়। আজো আমাদের পেছন ফিরে বারবার দেখতে হয়, দেখাতে হয়। বারবার বলতে হয়, কেন আমরা স্বাধীনতার মতন একটা চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছিলাম। মূলত ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠা না হবার ক্ষোভে এই ভূখণ্ডের শান্তিপ্রিয় মানুষ স্বাধীনতা সংগ্রামের মতন একটি রক্তক্ষয়ী পথে অগ্রসর হয়েছিলো। অথচ স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছর পেরুনোর পরও সেই অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য আজো আন্দোলন চলে। আজও রক্ত ঝরে। ১৯৭১ থেকে আজ ২০২২, এখনো স্বাধীনতার মূল চেতনা প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হয়নি। হয়নি ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠা। না হওয়ার কারণ হলো সেই পেছন চলা মানুষগুলো, যারা সামনে এগিয়ে যেতে ভয় পান। জানি না, তারা কীসে ভয় পান, উদযাপনে তাদের কেন এতো ভয়। কেন ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠায় তারা পেছনে থাকেন। সাত-পাঁচ চৌদ্দের হিসেব টেনে আনেন। কেন বাইশ পরিবার থেকে বাইশ হাজার পরিবারের প্রতিষ্ঠায় কথা বলেন না। 

এদেশের সম্পদ লুট করে পশ্চিম পাকিস্তানে নিয়ে যাওয়ার বিরুদ্ধে গর্জে ওঠার উদাহরণ দিয়ে, হালের লক্ষকোটি টাকা লুট বিষয়ে নিশ্চুপ থাকেন। শুধু লুট নয়, আরও অসংখ্য বিষয় রয়েছে যার সঙ্গে স্বাধীনতার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য কোনোভাবেই মেলে না। সেসব বিষয়ে তাদের ‘রা’টি নেই, একেবারে সুবোধ বালক। তবে কি আমরা মানুষের পায়ে অগ্রসর না হয়ে অতীতমুখী ভূতের পায়ের ওপর ভর করার জন্যই রক্ত দিয়ে স্বাধীনতা অর্জন করেছিলাম, দুঃখজনক হলেও ২০২২ এসে এই প্রশ্নটা আমাদের সঙ্গতই করতে হয়। এখনো কেউ কেউ লিখেন, ‘বিজয় দিবস পালিত’। জানি না, আমাদের উদযাপনের সময়টা আসবে কবে। লেখক : সাংবাদিক ও কলামিস্ট।