
প্রকাশিত: Fri, Dec 8, 2023 10:07 PM আপডেট: Tue, Jun 24, 2025 12:27 AM
শিক্ষা, শিক্ষার সামাজিক পার্থক্য এবং বৈচিত্র্য
কাকন রেজা : উন্নত দেশগুলিতে শিশুদের কীভাবে শিক্ষা দেয়া হয় তার কিছু ভিডিও ক্লিপ জোগাড় করেছেন কেউ কেউ এবং করেছেন আমাদের নয়া শিক্ষা কারিকুলামকে সমর্থন করার জন্য। তা তারা করতেই পারেন। আত্মপক্ষ সমর্থনের অধিকার সবারই আছে, এমনকি উচ্চিংড়েদেরও। গলির মোড়ের নসু যাকে খ্যাপাটে স্বভাবের জন্য নসু পাগলা বলা হয়, তারও আত্মপক্ষ সমর্থনের অধিকার রয়েছে।
কথা সেটা না, কথা হলো পারিবারিক ও সামাজিক সংস্কৃতি নিয়ে। বুঝলেন না তো, এই মনে করুন আমাদের দেশের পারিবারিক ও সামাজিক ব্যবস্থার সাথে কি জাপানের ব্যবস্থা কিংবা আচরণ অথবা সংস্কৃতির মিল রয়েছে? নেই। অ্যামেরিকার রয়েছে, ইউরোপের উন্নত কোনো দেশের? নেই তো। কথাটা সেখানেই। যুক্তরাষ্ট্রের পারিবারিক-সামাজিক সংস্কৃতির কথা বলি। সেখানে মায়েরা কিংবা বাবারা বাচ্চাদের বিছানা গোছানো শেখানোর সময়টা পান না। চাইল্ড কেয়ার হোম-এ বাচ্চাদের রেখে কাজে চলে যান বাবা-মা। কাজ শেষে সেখান থেকে নিয়ে যান বাচ্চাদের। যখন স্কুলের সময় হয়, স্কুলের বাস এসে বাচ্চাদের নিয়ে যায়। ঘরের কাজ শেখানোর সময় সেখানের বাবা-মাদের হয়ে ওঠে না এবং তা সিংহভাগ ক্ষেত্রেই। আর সেখানে প্রয়োজনও পড়ে না। কাপড় কাচার জন্য রয়েছে ওয়াশিং মেশিন। খাবার আসে বাইরে থেকে কিংবা রেস্তোরাঁয় হয়ে যায় ব্রেকফাস্ট- লাঞ্চ-ডিনার। বাসায় রান্নাই হয় না অনেক সময়। এটাই তাদের সামাজিক সংস্কৃতি। ওখানের মেয়েদের রান্না শেখা আব্যশকীয় নয়। সুতরাং সেখানের ভিডিও ক্লিপ আমাদের দেখিয়ে লাভটা কী?
দেখতাম, যারা নিজেদের ঐতিহ্যের কথা গর্বের সাথে বলতেন। এমনকি যে ইসলাম এই দেশের মানুষকে তুলনামূলক আধুনিক করেছে সেই ইসলামকেও মরু-সংস্কৃতি তথা ভিন্ন সংস্কৃতি হিসেবে আখ্যা দিয়ে মানুষকে সে সংস্কৃতি ত্যাগ করতে বলতেন, তারাও এখন পরদেশি শিক্ষার ভিডিও দেখাচ্ছেন মানুষকে। যারা সংস্কৃতকে বাংলার জননী বলতেন এবং আরবি-ফার্সিকে অচ্ছ্যুৎ ভাবতেন। যারা ওড়না, ওজু এসব শব্দ নিয়ে একসময় পুরো দেশের অবস্থাকে লেজে-গোবরে করে ফেলেছিলেন, তাদের অনেককেই দেখি শিক্ষকদের কোলাব্যাঙ সাজা, ‘প্যাঁক প্যাঁক’ এর মতন অদ্ভুত শব্দযোগে শিক্ষকদের হাস্যকর কসরতকে বাহবা দিচ্ছেন। তারা কি তবে নিজেদের ঐতিহ্যকে ভুলে গেলেন? আমরা দেখে এসেছি শিক্ষকদের কতটা সম্মান করতো মানুষ, সমীহ করতো। যে কোনো সঠিক সিদ্ধান্তের জন্য শিক্ষকের দ্বারস্থ হতো অনেকেই। মানুষ গড়ার কারিগর হিসেবে আখ্যায়িত করা হতো শিক্ষকদের। সেই শিক্ষকদের আজ হাস্যকর চরিত্র হিসেবে আখ্যায়িত হতে হচ্ছে! তাদেরকে নিয়ে ট্রল হচ্ছে! একটা ভিডিও ক্লিপে একজনকে দেখলাম তৃতীয় লিঙ্গের অভিনয় করতে! আজব!
অন্য আরেক ক্লিপে দেখলাম এক ছ্ত্রাী সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠে কীভাবে বিছানা গোছাতে হয় তা অভিনয় করে দেখাচ্ছে। আর এই হাস্যকর ব্যাপারটি শিখিয়েছেন তারই শিক্ষক। আমাদের দেশের মেয়েদের বিছানা গোছানোর ব্যাপার শেখানো হয় পরিবার থেকে। যাকে বলা হয় পারিবারিক সংস্কৃতি। মা’রাই ছোটবেলায় মেয়েদের মাথায় ঢুকিয়ে দেন ব্যাপারটি। দাঁত মাজা থেকে হাতধোয়া সবই পারিবারিক সংস্কৃতির অংশ এবং তা শেখানো হয় পরিবার থেকেই। রান্না করা, কাপড় গোছানো থেকে রান্নাঘর গোছানো সবই সে সংস্কৃতিরই অংশ।
আমাদের পারিবারিক-সামাজিক সংস্কৃতিতে এসব ঘর থেকেই শেখে বাচ্চারা। তাদের স্কুলে এসব শিক্ষার আদৌ কোনো প্রয়োজন নেই। প্রয়োজন রয়েছে পাশ্চাত্য সংস্কৃতির। যেখানে বাচ্চারা মা-বাবার দেখা খুব কম সময়ের জন্য পায়। ফলে তাদের পরিবার থেকে কিছুই শেখা হয়ে ওঠে না। আমার নিজেরই এক বান্ধবী আছেন, ইউরোপের একটি দেশে থাকেন। তিনি কখনো নিজ হাতে রান্না করে কিছু খাননি। তার খাওয়া হয়েছে চাইল্ড কেয়ার হোমে এবং বড় হলে রেস্তোরাঁতে। এমন সংস্কৃতির মানুষকে রান্না শেখানো যায়। বিপরীতে যে দেশের প্রতিটি মেয়েই প্রায় জন্মগত রাধুনি, তাদের রান্না শেখানোর কসরত বাতুলতা মাত্র। যারা এসবের পক্ষে কথা বলেন, তাদের পৃথিবী সম্পর্কে জ্ঞান নিয়ে সংশয় পোষণ করাই যায়। প্রতিটা দেশের শিক্ষা-সংস্কৃতির আলাদা বৈশিষ্ট্য রয়েছে, বৈচিত্র্য রয়েছে। এসবই তাদের নিজস্ব স্বকীয়তা। নিজের স্বকীয়তাকে বিসর্জন দেয় বোকারা। লেখক : সাংবাদিক ও কলামিস্ট
আরও সংবাদ
চ্যাম্পিয়ন ভারত : একটা ছোট মুহূর্ত কতো বড় পার্থক্য গড়ে দিতে পারে
‘ওই ক্যাচ হয়নি, সুরিয়াকুমারকে আবার ক্যাচ ধরতে হবে’!
কতো দেশ, কতোবার কাপ জিতলো, আমাদের ঘরে আর কাপ এলো না!
সংগীতাচার্য বড়ে গোলাম আলি খান, পশ্চিমবঙ্গের গর্ব সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় ও আমি
ইন্ডিয়ান বুদ্ধিজীবী, ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্র ও দেশের বুদ্ধিজীবী-অ্যাক্টিভিস্ট
মতিউর প্রতিদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ৮৩ ব্যাচের বন্ধুদের গ্রুপে সৎ জীবন যাপনের উপদেশ দিতেন!

চ্যাম্পিয়ন ভারত : একটা ছোট মুহূর্ত কতো বড় পার্থক্য গড়ে দিতে পারে

‘ওই ক্যাচ হয়নি, সুরিয়াকুমারকে আবার ক্যাচ ধরতে হবে’!

কতো দেশ, কতোবার কাপ জিতলো, আমাদের ঘরে আর কাপ এলো না!

সংগীতাচার্য বড়ে গোলাম আলি খান, পশ্চিমবঙ্গের গর্ব সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় ও আমি

ইন্ডিয়ান বুদ্ধিজীবী, ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্র ও দেশের বুদ্ধিজীবী-অ্যাক্টিভিস্ট
