
প্রকাশিত: Tue, Dec 26, 2023 10:08 PM আপডেট: Mon, Jun 23, 2025 5:45 PM
নিশ্চিত হেরে যাবে জানার পরেও যে যুদ্ধে নামে, তাঁকে আমি সবসময় সাধুবাদ জানাই
রাশেদ আলম : মাহিকে নিয়ে সবাই ট্রল করছে। আমিও প্রথমে বিষয়টি হাস্যকর হিসেবে নিয়েছিলাম। তবে আমার ধারণা সম্পূর্ণ ভুল হয়েছে। বিষয়টি আমার কাছে মনে হয়েছিলো অন্যান্য তথাকথিত শিল্পী মানে তারিন, ডিপজল বা ফেরদৌসদের মতো তিনি আওয়ামী লীগের নমিনেশন কিনবেন। যদি লটারি লেগে যায়, তাইলেই ছক্কা ধরনের ধান্দাবাজি কিছু! ফেরদৌসের লটারি লেগে গেছে, ব্যস হয়ে গেছে। তারিন, ডিপজলদের এবার লটারি লাগে নাই, আগামীতে আবার লটারি লাগার আশায় তারা থেকে যাবেন। যদি বাস্তবে বিএনপি-আওয়ামী লীগ নির্বাচন যুদ্ধ হতো, তবে এসব ফেরদৌসদের নমিনেশন পাওয়া দূরের কথা, নমিনেশন কেনার চিন্তাও তারা করতো কিনা সন্দেহ। ২০১৪ সালের নির্বাচন থেকেই এসব ধান্দাবাজদের একটাই স্বপ্ন, নমিনেশন নেবো, হাস্যকর তেলবাজি করব যদি নমিনেশন পেয়ে যাই তাইলে তো অটোপাস এবং লটারি লেগে গেছে। নির্বাচনের মাঠে আসল যুদ্ধে নেমে জয় ছিনিয়ে আনার চেষ্টা বা যুদ্ধ করতে হলে অনেক বড় কলিজা লাগে। আর এখানেই মাহিয়া মাহি আমার ধারণা চেঞ্জ করে দিয়েছেন এই কয়দিনে।
মাহি নমিনেশন পায় নাই, কিন্তু তিনি নির্বাচনকে সিরিয়াসলি নিয়েছে। সাহস করে স্বতন্ত্র দাঁড়িয়ে গেছে শুধু নয়, রীতিমতো প্রচলিত প্রার্থীদের মতো সারাদিন রাত নির্বাচনী এলাকায় অন্যান্য সিজেন পলেটিক্যাল পারসনদের মতো ঝাপিয়ে পরেছে। সাধারণ মানুষের সাথে মিশতেছে, কথা বলতেছে। একজন নাইকা ইমেজের কেউ হুট করে এভাবে কোনো রাজনৈতিক শেল্টার ছাড়া, নিশ্চিত পরাজয় জেনেও চ্যালেঞ্জ নেওয়া খুব কম সাহসের নয় কিন্তু। মাহি ভালো করেই জানেন আওয়ামী লীগ থেকে নমিনেশন চেয়ে না পেয়েও সে স্থানীয় আওয়ামী লীগ থেকে কোনো সাহায্য পাবেন না বরং বাঁধায় পড়বেন এবং বাধায় পরতেছেনও। যেহেতু মার্কা নৌকা নয়, তাই প্রশাসনের সাহায্যও তিনি পাবেন নাÑ এইটাও মাহি জানে। তবুও তিনি নির্বাচনটা সিরিয়াসলি করতেছেন। এবার মাহি জয় পাবেন না, কিন্তু আগামীতে তার এসব কাজ অনেক কাজে আসবেন। বিশেষ করে ২০২৯ সালের নির্বাচনে। তখন আওয়ামী লীগও তাকে নমিনেশন দেবে কিনা তা সিরিয়াসলি দেখতে হবে। এখানেই মাহিয়া মাহি নির্বাচনের আগেই জিতে গেলেন।
আমি এই মাহির সিনেমা দেখা দূরের কথা, তাকে নিয়ে কোন আগ্রহও ফিল করি নাই, এটাই স্বাভাবিক। বরং এদের নিয়ে সংবাদ সবসময় বিরক্তি নিয়ে এড়িয়ে যাই। কারণ বাংলাদেশের সিনেমা নামক অখাদ্য যেসব তৈরি হয় এফডিসির সিনেমা মেইন স্ট্রিম থেকে, তার জন্যে এদের সকলের উপর ক্ষোভ কাজ করে। ফেরদৌস, রিয়াজ, জায়েদ খান,অপু বিশ্বাস, সাকিব, বুবলি,ওমর সানি, মৌসুমি তারা অভিনেতা বা অভিনেত্রী হিসেবে আমার কাছে ভার ছাড়া অন্য কিছু নন। কিন্তু বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে প্রতিদিন মাহির নির্বাচনের জন্যে দৌড়াদৌড়ি ও পরিশ্রমের সংবাদ অনিচ্ছাকৃত হলেও যখন চোখের সামনে আসতেছিল বারবার তখন, দেখতে ও পড়তে বাধ্য হলাম।
আমার মতো বাংলাদেশের সিনেমার এসব নায়ক, নায়িকা দূরের কথাÑ তাদের সিনেমাতেও যাদের বিন্দুমাত্র আগ্রহ নেই তাদের কাছেও মাহির এই চ্যালেঞ্জ নেওয়া, পরিশ্রম করা ইতিবাচক হয়ে দেখা দিচ্ছে। আমাদের মতো সাধারণ মানুষেরাও তাকে জাজ করছে একজন নির্বাচনের প্রার্থী হিসেবে। এটাই তার সার্থকতা। নায়ক ফেরদৌস, ক্রিকেটের সাকিবেরা কি নৌকা নমিনেশন না পাইলে স্বতন্ত্র করার সাহস করত? মাশরাফি এবার নৌকা না পাইলে কি নির্বাচন করার সাহস করতো? নিজের পকেটের টাকা খরচ করে, এত শ্রম দিয়ে নিশ্চিত পরাজয় মেনে নিয়েও সাহস করে নির্বাচন এসব ফেরদৌস, সাকিব এমনকি মাশরাফিরও সাহস হইতো না নিশ্চিত। তারা ফ্রি ফ্রি এমপি হবার জন্যই এসেছেন, রাজনৈতিক কোনো আহামরি চিন্তা করে নয়। সেখানে মাহি সাহস করে নিজের টাকায় যুদ্ধে নেমে গেছে।
বহু পুরুষ মানুষকেও দেখছি সারাজীবন রাজনীতি করে, দুনিয়ার ত্যাগ শিকার করেও চ্যালেঞ্জ নেয়ার সাহস করে না। মাথা নিচু করে লাইফ পার করে দেয়। নিজেদের নিজেরা সান্ত¦না দেয়Ñ আদর্শের জন্য রাজনীতি করি, পদ-পদবির জন্যে রাজনীতি করি না আরও কত কথা। আসলে যে ভিতু সেটা স্বীকার করে না। কত ভাই ব্রাদার দেখছি সেই বিশ বছর থেকে নেতাদের পেছন পেছন ঘুরে তো ঘুরেই। এখনো বলার মতো কোনো পদ নাই, অথবা ভিক্ষা হিসেবে এদিক সেদিক হাস্যকর কিছু কমিটিতে সদস্য পদ পাইছে তাতেই মহা খুশি। আজকেই দেখলাম, বিশ্ববিদ্যালয়ের এক বড় ভাই নিজের দশ বছর ছোট এক নেতার পাশে দাঁড়িয়ে ছবি তুলে পোস্ট দেয়নÑ আমার নেতা, আমার আদর্শ। অথচ এই নেতা যখন ক্লাস ফাইভে পড়ে, রাজনীতির ‘র’ জানে না তখন আমার বিশবিদ্যালয়ের বড় ভাইটি রাজনীতি করে বিশ্ববিদ্যালয়ে। এখন সেই ক্লাস ফাইভের বাচ্চাও বলে বড় ভাইয়ে আদর্শিক নেতা। চুল দাড়ি পাকায় ফেলছে রাজনীতি করতে করতে, আজকে ডাক দিলেও একটা ছেলে তার জন্য দশ মিনিট পাশে দাঁড়াবে না। তারা আজীবনই অন্যের পা চেটে বেঁচে থাকার জন্যে জন্ম নিয়েছে।
এখানেই মহিরা ভিন্ন, চ্যালেঞ্জ নিতে জানে। চাইছি নমিনেশন, দেয় নাই তো কি হয়েছে? নিজের যোগ্যতা নিজেই প্রমান করে দেখাবো। মাহির মতো মানুষদের নিয়ে ট্রল করা সহজ, কিন্তু তাদের এভাবে সাহস করে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টাকে প্রশংসা করা হয়তো কিছুটা কঠিন। তবুও কঠিন চেষ্টাটি করলাম। কারণ নিশ্চিত হেরে যাবে জানার পরেও যে যুদ্ধে নামে, তাকে আমি সবসময় সাধুবাদ জানাই। সমাজে এ ধরনের মানুষেরা নিজেদের অজান্তেও অনেক যোদ্ধা তৈরি করে সমাজের অনেক ক্ষেত্রে অনেক পরিসরে, সমাজ তাদের জন্যই মহিমান্বিত হয়। মাহিয়া মাহির জন্য শুভকামনা। ট্রল তো করাই যায়, আসুন না সাধুবাদও জানাই তার পরিশ্রমকে। ফেসবুকে ২৫-১২-২৩ প্রকাশিত হয়েছে।
আরও সংবাদ
চ্যাম্পিয়ন ভারত : একটা ছোট মুহূর্ত কতো বড় পার্থক্য গড়ে দিতে পারে
‘ওই ক্যাচ হয়নি, সুরিয়াকুমারকে আবার ক্যাচ ধরতে হবে’!
কতো দেশ, কতোবার কাপ জিতলো, আমাদের ঘরে আর কাপ এলো না!
সংগীতাচার্য বড়ে গোলাম আলি খান, পশ্চিমবঙ্গের গর্ব সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় ও আমি
ইন্ডিয়ান বুদ্ধিজীবী, ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্র ও দেশের বুদ্ধিজীবী-অ্যাক্টিভিস্ট
মতিউর প্রতিদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ৮৩ ব্যাচের বন্ধুদের গ্রুপে সৎ জীবন যাপনের উপদেশ দিতেন!

চ্যাম্পিয়ন ভারত : একটা ছোট মুহূর্ত কতো বড় পার্থক্য গড়ে দিতে পারে

‘ওই ক্যাচ হয়নি, সুরিয়াকুমারকে আবার ক্যাচ ধরতে হবে’!

কতো দেশ, কতোবার কাপ জিতলো, আমাদের ঘরে আর কাপ এলো না!

সংগীতাচার্য বড়ে গোলাম আলি খান, পশ্চিমবঙ্গের গর্ব সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় ও আমি

ইন্ডিয়ান বুদ্ধিজীবী, ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্র ও দেশের বুদ্ধিজীবী-অ্যাক্টিভিস্ট
