কাজী এম. মুর্শেদ : স্টার্টআপ নিয়ে কয়েকবার লেখার চেষ্টা করেছি, হয় বেশকিছু জিনিস মিলিয়ে ফেলেছি, না হলে আমার ধারণায় কমতি আছে। চেষ্টা করি। আমি যা বুঝি, ইনোভেশন, স্টার্ট-আপ, এ্যাঞ্জেল ইনভেস্টর, ভেঞ্চার ক্যাপিটাল সবগুলোই কোনো না কোনোভাবে কাছাকাছি আসা একটা সুস্থ ব্যবসায়িক মডেল। এই মডেল যতো ভালো কাজ করবে, দেশের জন্য ভালো। উদাহরণ, ভারতের ইউনিকর্নগুলো। মানুষের আইডিয়া বিশাল বড় সম্পত্তি। যে দেশের যতো মেধা, তাদের উন্নতি ততো বেশি হয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র পৃথিবীর অর্থনীতি রাজত্ব করার সবচেয়ে বড় কারণ মেধা সংরক্ষণ। এই সংরক্ষণের সবচেয়ে বড় পদক্ষেপ হলো বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মেধা একত্রিত করা। যার সেই মেধা আছে, তাদের ধরে রাখার পূর্ণ চেষ্টা করে। বিশ্ববাণিজ্যে যেখানে চীন বা ভারত পণ্য তৈরিতে এগিয়ে আসছে, আমেরিকার হাতে তারচেয়েও বড় জিনিস, কপিরাইট বা মেধাসত্ত্ব, যা তৈরি করবে করুক, মেধাসত্ত্ব তাদের হাতে। 

মেধার কথা বললাম যে কারণে, মনে করেন বাংলাদেশে কিছু একটা আবিষ্কার করে বিশ্ববাজারে প্রতিষ্ঠা পেতে চায়। কোনো কিছু বানানো যথেষ্ট নয়, একটা তিন স্টেপের নিয়ম মেনে করতে হয়। নিয়মটা হলো আইডিয়া, তৈরি, বাজারজাতকরণ। এখানে আইডিয়া সবচেয়ে ভালো আসে পাবলিক বা প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। সেটা তৈরিতে সরকারের এগিয়ে আসতে হয় এবং বাজারজাত করে বাণিজ্যিকভাবে নিতে বিনিয়োগকারী দরকার। স্টার্টআপের মূল ব্যাপারটা এখানে, আইডিয়া আনা, সেটাকে সাহায্য করতে মূলত ইনভেস্টমেন্ট দরকার। সেটা সরকারি বা বেসরকারি বা যে কেউ হতে পারে। সাধারণত এখানে এঞ্জেল ইনভেস্টর এগিয়ে আসে। সেটা যখন সত্যিকার সাফল্যের দিকে যায়, তখন ভেঞ্চার ক্যাপিটাল ফার্ম এগিয়ে আসে, সর্বোপরি যখন বড় সাফল্য পায় তখন ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংকাররা এগিয়ে আসে। যেকোনো সরকার একটা প্লাটফর্ম তৈরি করে দিতে পারে, সাফল্য আসতে হবে বিশেষ প্রক্রিয়ায়, সঠিক বিপনন ব্যবস্থা যার মাধ্যমে টার্গেট মার্কেটের কাছে পৌঁছাতে পারে। একটা মাধ্যম অবশ্যই ই-কমার্স, তবে এখানে বড় একটা রোল আছে গ্রোথ হ্যাকিং মার্কেটিংয়ের। যা বলতে চাই, ট্রাডিশনাল মার্কেটিং যেমন টিভি বা নিউজপেপার বিজ্ঞাপন বা বিলবোর্ড কাজ করে না। কাজ করে রেফারাল/ইনফ্লুয়েন্সার মার্কেটিং, বিভিন্ন পার্সোনালাইজড মিডিয়াম ব্যবহার এবং নিরন্তর নতুন ধারা ব্যবহার করা। যখনই থেমে যাবেন, আটকে যাবেন। 

আমার নিজস্ব মতামত আমার, ভুল হলেও আমার, ঠিক হলেও আমার। আইডিয়া নিয়ে বাংলাদেশ বিভিন্ন পুরস্কার দেওয়া হয় সরকারি তত্ত্বাবধানেÑ আমার দেখা প্রতিটা পুরস্কার স্রেফ ড্রেনে ফেলবার মতো। কিছু ক্ষেত্রে খাতির করে দিতে হয়, কিছু ক্ষেত্রে কিনে নিতে হয়। সরকারি তত্ত্বাবধানে কোনো আইডিয়া জেনারেট বা এ্যাওয়ার্ড অসম্ভব কাজ। কিছু অনুষ্ঠান করেছে, আমি নিজেও ছিলাম, যেই সব আইডিয়া আসে কোনোটাই মনে হয়নি কোনো ইউনিকনেস আছে। কিছু বিশ্ববিদ্যালয় ও টিভি অনুষ্ঠানও দেখেছি, আমার কাছে মনে হয়নি কাজের কিছু। আমাকে কেউ ভুল প্রমাণ করলে খুশি হতাম, যারা পুরস্কৃত হয়েছে কেউই সামনে এগোতে পারেনি। আমার পরিচিত এক বড়-ভাই ভেঞ্চার ক্যাপিটাল ব্যবসায় ছিলেন। আল্লাহ উনার রুহের মাগফেরাত করুন। উনার কাছে আইডিয়া দেখেছি ডজনের উপর ডজন। কিছু আমি পড়েও দেখেছি, বেশিরভাগ খারাপ, কিছু ভালো। আমাকে কয়েকটা বাছতে বলেছিলেন, বেছে দিয়েছি। উনি তাদের সঙ্গে কথা বলেছেন, আমাকে জানিয়েছিলেন, আইডিয়া ভালো, কিন্তু এরা অংক বোঝে না। কয়েকটা প্রশ্ন জিজ্ঞাস করলেই বোঝা যায় তাদের অর্থনীতি ও বিপণনের জ্ঞানের অভাব, তারপরও কিছু ঠিকঠাক করে নেওয়া যায়। দায়িত্ব দিতে চেয়েছিলেন তাদের মেন্টরিং করার, সময়ের অভাবে হাতে নেই। 

আবার আসি বেসিক কিছু কথায়, আইডিয়া কীভাবে আসে? যাঁদের সঙ্গে কথা বলেছি, বিশেষত দুইটা ইউনিভার্সিটিতে মার্কেটিং শেষবর্ষের স্টুডেন্টদের ডিসকাশন সেশন নিয়েছি সেলসম্যানশিপের উপরে। আমার ধারণা, বাংলাদেশে সেলসম্যানশিপ কোথাও শেখানো হয় না। এজন্য একটা বই লিখেছিলাম আমার নিজের অভিজ্ঞতা নিয়ে, নাম সেলসম্যানের ডায়েরি। বইটা রকমারিতে পাওয়া যায়। যা বলছিলাম, আইডিয়ার শুরু কোনো সমাধান নিয়ে। ছাত্র বলেন বা উদ্যোক্তা, আমাদের সবচেয়ে বড় সমস্যা এরা সমাধান খোঁজে। আপনি আইডিয়া তৈরি করতে গেলে সমস্যা খোঁজেন, সমস্যা যতো বেশি খুঁজবেন আপনার লাভ। সমস্যা পেলেই সমাধান খুঁজে পাবেন। লেখাটা এলোমেলো লাগলে দোষ আমার। টিভিতে অসম্ভব বাজে টকশো দেখতে দেখতে লিখছিলাম, কোনো এটেনশন ছিলো না। উপরন্তু লেখার রিচ কমে গেছে আপনারা তেমন পড়বেন না বলে নিজের কাঁধে নিয়ে নিলাম। মেধা, আইডিয়া, স্টার্টআপ, বাণিজ্যিকিকরণ, ইনভেস্টমেন্ট এবং ইউনিক বিপণন করা, সবকিছু শেষটায় এসে থামে সাফল্যে। ইউনিকর্ন, নিজেকে জিজ্ঞাস করেন বাংলাদেশে ২০২৪ বা ২০৩০ সালে কয়টা ইউনিকর্ন হতে পারে? আপনি কি মনে করেন যাঁদের বলা হচ্ছে তারা আদৌ কোনো ইউনিক আইডিয়া এনেছে? যারা দাবি করে, কেউ কি সেই ভ্যালুয়েশনে যেতে পেরেছে? বিশ্বাস করেন? ফেসবুকে ২৮-১২-২৩ প্রকাশিত হয়েছে।