
প্রকাশিত: Tue, Dec 20, 2022 4:14 AM আপডেট: Sun, Jun 22, 2025 4:49 PM
খেলাধুলা বা সংস্কৃতিচর্চা কখনোই যুবসমাজকে নষ্ট করে না
স্বকৃত নোমান
একটি ছবি এবং কয়েকটি পোস্ট ভাইরাল হয়েছে ফেসবুকে। ফুটবল ফাইনাল চলাকালে কুমিল্লার দেবিদ্বারে একটি বিশাল ওয়াজ মাহফিলের মাঠ ফাঁকা, কোনো শ্রোতা নেই, খেলা শুরু হওয়ার পঁয়ত্রিশ মিনিট আগে সবাই খেলা দেখতে চলে গেছে! খেলার কারণে আরেক মাওলানার ওয়াজ মাহফিল বাতিল হয়ে গেছে। সেই মাওলানা অভিশাপ দিয়ে ফেসবুকে পোস্ট দিয়েছেন, ‘হে আল্লাহ, যে দলের জন্য আজকের প্রোগ্রাম ক্যান্সেল হলো, যুবসমাজ নষ্ট হচ্ছে, সেই দল যেন জিততে না পারে’! আরেক একজন মাওলানা পোস্ট দিয়েছেন যে, মাহফিল চলাকালে হঠাৎ মাইক নষ্ট। মাইকম্যানকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। কোথায় গেলো? কোথায় আবার? মাহফিল রেখে খেলা দেখতে চলে গেছেন!
এই ঘটনাগুলো থেকে বাঙালি-চরিত্র অনুধাবন করা যায়। বোঝা গেলো, বাঙালি ধর্মেও আছে, জিরাফেও আছে। সে ইহলৌকিক সমস্ত আমেজ চায় এবং পরলৌকিক আমেজেরও আকাক্সক্ষী। একটির চেয়ে অন্যটিকে সে বড় করে দেখে না; বরং কখনো কখনো ইহলৌকিকতাকেই সে প্রাধান্য দেয়। কখনো কখনো ইহলোকিকতার জন্য পরলৌকিকতাকে ত্যাগ করতেও প্রস্তুত। যেমন করেছে আর্জেন্টিনা-ফ্রান্স ফাইনাল খেলার সময়। ওয়াজ মাহফিল নিয়ে আমাদের কোনো আপত্তি নেই। অবশ্যই ধর্মীয় ওয়াজ মাহফিল চলবে, কীর্তন চলবে, পূজা-আর্চা চলবে। যার যার ধর্মপালন ও প্রচার সাংবিধানিক অধিকার। কিন্তু ধর্মীয় অনুষ্ঠানের নামে খিস্তি-খেউড়, পরধর্মনিন্দা, পরমতনিন্দা, নারীর অপমান, জঙ্গিবাদে উস্কানি অপরাধ; যা অধিকাংশ ওয়াজ মাহফিলে হরহামেশা চলছে।
অধিকাংশ ওয়াজ মাহফিল এখন ব্যবসায় রূপান্তরিত হয়েছে। ওয়াজের নামে আয়োজক কমিটি লাখ লাখ টাকা উত্তোলন করে, হেলিকপ্টার ভাড়া করে, পাজেরো ভাড়া করে বক্তাকে নিয়ে যায়, কিছু টাকা খরচ করে আর কিছু নিজেরা মেরে দেয়। সন্দেহাতীতভাবেই ওয়াজ মাহফিল এখন বড় ব্যবসা। নইলে খেলার জন্য মাহফিল ক্যান্সেল হয়েছে বলে ওই বক্তা এভাবে অভিসম্পাৎ দিতেন না। প্রকৃত কোনো ধর্মীয় বক্তা কাউকে অভিশাপ দেন না, বরং ক্ষমা করেন, শান্তির চাদরে ঢেকে নেন।
গত কুড়ি বছর ধরে বাংলাদেশে সাংস্কৃতিক তৎপরতার দশা বড়ই নাজুক। সংস্কৃতিচর্চার প্রদীপগুলো একটি একটি করে নিভে গেছে। সরকারের পৃষ্ঠপোষকতাহীনতার কারণে সংস্কৃতিচর্চার এই দশা। যদি প্রতিটি গ্রামে গ্রামে যাত্রাপালা হয়, নাটক হয়, সংগীতানুষ্ঠান হয়, ক্রিকেট-ফুটবল-হাডুডু-নৌকাবাইচ ইত্যাদি খেলাধূলার আয়োজন হয়, তবে মানুষ বিদ্বেষভরা ওয়াজ মাহফিলের বদলে এসব সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানেই যাবে। এখন তাদের হাতে কোনো বিকল্প নেই। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানগুলোর বিকল্প হিসেবে দাঁড়িয়ে গেছে ওয়াজ মাহফিলগুলো, সে কারণেই মানুষ ওগুলোতে যাচ্ছে। বিকল্প থাকলে ওয়াজ মাহফিলের নামে এসব ব্যবসা কমে যেত। এখানেই সংস্কৃতির শক্তি।
সংস্কৃতিচর্চা কখনোই যুবসমাজকে নষ্ট করে না, বরং বিশুদ্ধ করে। সুন্দর মন, সুন্দর জীবন গঠন করে। সংগীত, নৃত্য, নাট্য, ক্রীড়া কখনোই তরুণ ও যুবসমাজের ভেতর বিদ্বেষের বিষ ভরে দেয় না, বরং ভরে দেয় প্রেম, ভালোবাসা ও সম্প্রীতি। সুস্থ ও সুন্দর জাতি গঠনে সংস্কৃতিচর্চার বিকল্প নেই। লোকায়ত সংস্কৃতিকে জাগিয়ে দেওয়ার কোনো বিকল্প নেই। কিন্তু সরকার তা বোঝে না, ক্ষমতাসীন দলের নেতারা বুঝতে চায় না। তারা বুঝতে পারছে না তাদের এই না বোঝার পরিণাম কী ভয়াবহ। এই না বোঝার মধ্য দিয়ে তারা নিজেদের নিরাপত্তাহীনতা তৈরি করছে সমাজে, নিজেদেরই বিপদ ডেকে আনছে। লেখক: কথাসাহিত্যিক
আরও সংবাদ
চ্যাম্পিয়ন ভারত : একটা ছোট মুহূর্ত কতো বড় পার্থক্য গড়ে দিতে পারে
‘ওই ক্যাচ হয়নি, সুরিয়াকুমারকে আবার ক্যাচ ধরতে হবে’!
কতো দেশ, কতোবার কাপ জিতলো, আমাদের ঘরে আর কাপ এলো না!
সংগীতাচার্য বড়ে গোলাম আলি খান, পশ্চিমবঙ্গের গর্ব সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় ও আমি
ইন্ডিয়ান বুদ্ধিজীবী, ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্র ও দেশের বুদ্ধিজীবী-অ্যাক্টিভিস্ট
মতিউর প্রতিদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ৮৩ ব্যাচের বন্ধুদের গ্রুপে সৎ জীবন যাপনের উপদেশ দিতেন!

চ্যাম্পিয়ন ভারত : একটা ছোট মুহূর্ত কতো বড় পার্থক্য গড়ে দিতে পারে

‘ওই ক্যাচ হয়নি, সুরিয়াকুমারকে আবার ক্যাচ ধরতে হবে’!

কতো দেশ, কতোবার কাপ জিতলো, আমাদের ঘরে আর কাপ এলো না!

সংগীতাচার্য বড়ে গোলাম আলি খান, পশ্চিমবঙ্গের গর্ব সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় ও আমি

ইন্ডিয়ান বুদ্ধিজীবী, ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্র ও দেশের বুদ্ধিজীবী-অ্যাক্টিভিস্ট
