প্রকাশিত: Tue, Dec 20, 2022 3:33 PM
আপডেট: Sun, Jun 22, 2025 5:01 PM

মেসি-রোকুজ্জুর প্রেমের সংসার

শারফিন শাহ্

মেসি ও তার স্ত্রী আন্তোনিলা রোকুজ্জুর বেশ কটি ছবি ভাইরাল। তাদের হাস্যেজ্জ্বল পরিবারের ছবিগুলো দেখে বাংলাদেশের দর্শকরাও চাইছেন, তাদের জীবনটাও যদি এমন হতো। আহা, স্ত্রীর হাতে বিশ্বকাপ তুলে দিয়ে যদি স্বামী ছবি তুলে দিতো। এগুলো বাঙালি স্বপ্ন। আজকাল কোনো তথ্য জানা দুমিনিটের কাজ। একটু সার্চ দিতেই মেসি আর তার স্ত্রী সম্পর্কে যা জানলাম, তাতে খানিকটা বিস্মিতই হলাম। মেসির সঙ্গে রোকুজ্জুর পরিচয় শৈশবে, আট বছর বয়সে মেসির গ্রোথ হরমোন সিন্ড্রোম রোগ ধরা পড়ে। এই রোগ হলে স্বাভাবিকভাবে বেড়ে ওঠা সম্ভব হয় না। মেসিকে দৈনিক একবার হরমোনাল থেরাপি নিতে হতো এবং এই থেরাপির চিকিৎসা ব্যয় বহন করতে তার পরিবার হিমশিম খেতে থাকে। পরে ১৩ বছর বয়সে বার্সেলোনা ক্লাব পাশে দাঁড়ালে চিকিৎসা ব্যয় পরিশোধ করা সম্ভব হয়।

টানা ১৭ বছর চার মাস এই থেরাপি নিতে হয়েছে মেসিকে। এর মধ্যে রোকুজ্জু সবসময়ই মেসির পাশে ছিলেন। রোকুজ্জু আর্জেন্টিনা ইউনিভার্সিটি থেকে সোশাল সায়েন্স অ্যান্ড হিউম্যানিটিস বিষয়ে ডিগ্রি নিয়ে ভর্তি হন ডেন্টালে। কিন্তু শুধু মেসির পাশে থাকতে তিনি  তার এই প্রোগ্রাম থেকে বিরতি নেন। এরপর কমিউনিকেশনে ডিগ্রি নিয়ে ফ্যাশন ব্যবসা ও মডেলিংয়ে জড়ান। তার আয় মোটামুটি আঁতকে ওঠার মতোই। ইতোমধ্যে মেসির সাথে রোকুজ্জুর বিয়ে হয়ে গেছে, সন্তানও হয়ে গেছে। মেসির বিশ্বকাপও জেতা হয়ে গেছে। আমাদের দর্শকরা তাদের বিশ্বকাপ পরবর্তী হাস্যেজ্জ্বল ছবিগুলোই শেয়ার করছেন। তাদের এই হাসিটুকু কীভাবে এলো তা অনেকেই জানেন না।

ব্যাপারটা কিছুটা অন্যের সুখে সুখটান তোলার ব্যর্থ প্রয়াসমাত্র। শৈশবে পরিচয় হওয়ার পর যদি জানা যায়, পরিচিত মানুষটার হরমোনাল প্রব্লেম, তখন তার পাশে কে থাকতে চায়। রোকুজ্জু ছিলেন এবং আছেন। সুতরাং তাদের পক্ষে এইসব ছবি স্বাভাবিক। আপনারা হয়তো এইসব ছবিতে সুন্দর একটি পরিবার দেখছেন, কিন্তু এই সুন্দর পরিবার আমাদের দেশেও আছে। সাকিব আল হাসান কি তার পরিবার নিয়ে সুখী নন? অথচ তার বউকে নিয়ে তো আপনারাই ট্রল করেন, মনে আছে তার কিশোরী মেয়েটা সূর্যমুখী ক্ষেতে গিয়েছিল ছবি তুলতে। সেইসব ছবি ছড়িয়ে কীসব নোংরামি হলো। একটা বাচ্চা মেয়েকে নিয়ে যারা ট্রল করেন, যারা পত্রিকার অনলাইন নিউজের মন্তব্যের ঘরে ভয়াবহ নারীবিদ্বেষ ছড়ান তারা আবার মেসির পরিবার নিয়ে গর্বও করেন। 

টলস্টয়ের ‘আন্না কারেনিনা’ উপন্যাসের প্রথম লাইনটা মনে পড়ছে, ‘ঐধঢ়ঢ়ু ভধসরষরবং ধৎব ধষষ ধষরশব; বাবৎু ঁহযধঢ়ঢ়ু ভধসরষু রং ঁহযধঢ়ঢ়ু রহ রঃং ড়হি ধিু’Ñপ্রতিটি সুখী পরিবার দেখতে একইরকম। আর প্রতিটি অসুখী পরিবার নিজেদের মতো করে অসুখী। তাই, সুখী পরিবার খুঁজতে মেসি আর রোকুজ্জুর দিকে তাকানোর প্রয়োজন পড়ে না। আপনার দৃষ্টি প্রসারিত করলে আশপাশেই দেখতে পাবেন। লেখক: প্রাবন্ধিক ও গবেষক