
প্রকাশিত: Thu, Jan 25, 2024 10:49 PM আপডেট: Mon, Jun 23, 2025 5:43 PM
ডিম ব্যবসায়ীদের জরিমানা; দুর্বৃত্ত সরকার; সাংবাদিকতার দেউলিয়াপনা
আরশাদ মাহমুদ, ফেসবুক: বৃহস্পতিবার সকালে প্রথম আলোর ড়হষরহব সংস্করণে একটা বড় খবর ছাপা হয়েছে। শিরোনাম ছিল ‘ডিমের দাম বাড়ানোর দায়ে ডায়মন্ড এগ ও সিপিকে জরিমানা’
খবরটা খুব আগ্রহ নিয়ে পড়তে শুরু করলাম এবং কিছুক্ষণ পরেই একাধিক প্রশ্ন মনে আসলো। শুধু ভাবছিলাম যে এদেশে কি ধান্দাবাজ, মুনাফাখোর, লোভী ব্যক্তিদের কি কখনোই উপযুক্ত সাজা হবে না। একই সঙ্গে ভাবলাম শাসনব্যবস্থার দুর্বৃত্তায়ন কি চলতেই থাকবে? আর সংবাদমাধ্যমগুলো কি কোনদিন প্রকৃত সাংবাদিকতা শিখবে না?
খবরটা শুরু হয়েছে এভাবে: বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগসাজস করে অস্বাভাবিকভাবে ডিমের মূল্য বৃদ্ধির অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় ডায়মন্ড এগ লিমিটেডকে আড়াই কোটি টাকা এবং সিপি বাংলাদেশ কোম্পানি লিমিটেডকে এক কোটি টাকা আর্থিক জরিমানা করা হয়েছে। বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশন এ বিষয়ে স্বপ্রণোদিত হয়ে মামলা করেছিল। মামলার শুনানি শেষে ২২ শে জানুয়ারি এই জরিমানার আদেশ দেয় কমিশন। রায় ঘোষনার ৩০ দিনের মধ্যে জরিমানার অর্থ বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশনের সংশ্লিষ্ট খাতে জমা দিতে হবে। তা না হলে প্রতিযোগিতা আইনের আলোকে প্রতিদিন এক লাখ টাকা জরিমানা যোগ হবে।
খবরে বলা হয়েছে, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিবেদন এবং একটি অনলাইন সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত ‘১৫ দিনে ডিম ও মুরগির বাজার থেকে ৫১৮ কোটি টাকা লুট’ শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদন ও বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদের ভিত্তিতে এই জরিমানা করা হয়। এই লুটের ঘটনা ঘটে গত আগস্ট মাসে।
খবরটা পড়ার পরে আমার কয়েকটি প্রশ্ন মনে জাগে।
১। কেন এই দুটো প্রতিষ্ঠানকে সবমিলে মাত্র সাড়ে তিন কোটি টাকা জরিমানা করা হলো। কারণ কমিশনের অনুসন্ধান অনুযায়ী তারা এই অল্প সময়ের মধ্যে ৫১৮ কোটি টাকা লুটে নিয়েছে।
২। তাহলে কি এটা ভেবে নেব ওই দুর্বৃত্ত ব্যবসায়ীরা মনে করেছে এই সামান্য পরিমাণ জরিমানা দিয়ে আমি যদি প্রায় ৫১৫ কোটি টাকা হজম করে নিতে পারি তাহলে আমার তো সব দোষ মাফ হয়ে গেল। সত্যি কথা বলতে কি এই লুটপাটের ঘটনা এখন অনেকটা নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ কারণে এদেশে কোন জনবান্ধব, দুর্নীতি বিরোধী সরকার আছে সেটা কোনভাবেই বিশ্বাস করতে পারি না।
শুধু ডিমের ক্ষেত্রেই না; যে কোন পণ্য সামগ্রী বা খাদ্যদ্রব্য এইভাবে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে অস্বাভাবিক পরিস্থিতি সৃষ্টি করে, মজুদ করে, দাম বাড়িয়ে নেয় ব্যবসায়ী নামধারী একটা লুটেরা গোষ্ঠী। এরা সরকারের প্রশ্রয়ে এই কাজগুলো করে পার পেয়ে যায়। প্রথাগতভাবে সরকার থেকে বলা হয় এদের বিরুদ্ধে উপযুক্ত শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে। কিন্তু কাউকেই এ পর্যন্ত আমরা জেলে যেতে বা তাদের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার কোনরকম উদাহরণ দেখতে পাইনি।
স্বভাবতই প্রশ্ন জাগে সরকারের কর্মকর্তা এবং আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো এদের লুটপাটের অংশীদার কিনা।
৩। এখন আসি প্রথম আলোর রিপোর্ট প্রসঙ্গে। প্রতিবেদনটি পড়ে মনে হয়েছে এই পত্রিকার সম্পাদক এবং প্রতিবেদক সত্যিকার অর্থে হধৎৎধঃরাব লড়ঁৎহধষরংস কি সেটা হয়তো জানেনা। প্রশ্ন হল, প্রথম আলো কেন এটা সম্পর্কে আরও বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করেনি এবং পাঠকদের জানায়নি। শুধুমাত্র প্রতিযোগিতা কমিশনের একটা প্রেস রিলিজ ছেপেছে।
আমার মাঝে মাঝে মনে হয় বাংলাদেশের সাংবাদিকতার এটা সবচেয়ে দুর্বল দিক। এদের রিপোর্ট পড়লে মনে হয় সম্পাদক এবং প্রতিবেদকরা প্রেস রিলিজ ছাপতেই শিখেছে। সাংবাদিকতা নয়।
আমি সম্পাদক হলে প্রতিবেদককে বলতাম ডায়মন্ড এগ এবং সিপি সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহের জন্য। যেমন তাদের মালিকপক্ষ কে; তাদের পলিটিক্যাল অ্যাফিলিয়েশন কি; তারা ঠিকমতো ট্যাক্স দেয় কিনা ইত্যাদি।
আর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি প্রথম আলো বুঝতে পারেনি অথবা চেপে গিয়েছে। প্রথমত রিপোর্টার কেন কমিশনের কারো সঙ্গে যোগাযোগ করে কতগুলো গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন করেনি: কেন কমিশন মাত্র সাড়ে তিন কোটি টাকা জরিমানা করে বিষয়টি নিষ্পত্তি করতে চেয়েছে। কারণ ইতিমধ্যেই এই লুটেরা ব্যবসায়ীরা ৫১৮ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। কেন এদের দীর্ঘমেয়াদি জেল জরিমানা হবে না? বা সম্পূর্ণ টাকা ফেরত দেবে না। আর টাকা দিতে না পারলে তাদের যাবতীয় স্থাবর- অস্থাবর সম্পত্তি সরকারের অনুকূলে বাজেয়াপ্ত করা হবে কিনা ইত্যাদি। এই প্রশ্নগুলো যদি কমিশনের কর্মকর্তাদের করা হতো তবে নিশ্চয়ই তারা একটা বক্তব্য দিত আর দিতে না চাইলে কেন দেয়নি সেটা নিয়ে প্রশ্ন করতে পারত। সেটাই হত মোটামুটি একটা গ্রহণযোগ্য সাংবাদিকতা।
অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় যে সাংবাদিকতার এই মূল দিকগুলো প্রায় অধিকাংশ সংবাদ মাধ্যম উপেক্ষা করে বা হয়তো বুঝতেই পারেনা।
মাঝে মাঝে ভাবি কবে বাংলাদেশের সংবাদ মাধ্যম সত্যিকার অর্থে দেশের এবং পাঠকদের স্বার্থে কাজ করবে।
আরও সংবাদ
চ্যাম্পিয়ন ভারত : একটা ছোট মুহূর্ত কতো বড় পার্থক্য গড়ে দিতে পারে
‘ওই ক্যাচ হয়নি, সুরিয়াকুমারকে আবার ক্যাচ ধরতে হবে’!
কতো দেশ, কতোবার কাপ জিতলো, আমাদের ঘরে আর কাপ এলো না!
সংগীতাচার্য বড়ে গোলাম আলি খান, পশ্চিমবঙ্গের গর্ব সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় ও আমি
ইন্ডিয়ান বুদ্ধিজীবী, ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্র ও দেশের বুদ্ধিজীবী-অ্যাক্টিভিস্ট
মতিউর প্রতিদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ৮৩ ব্যাচের বন্ধুদের গ্রুপে সৎ জীবন যাপনের উপদেশ দিতেন!

চ্যাম্পিয়ন ভারত : একটা ছোট মুহূর্ত কতো বড় পার্থক্য গড়ে দিতে পারে

‘ওই ক্যাচ হয়নি, সুরিয়াকুমারকে আবার ক্যাচ ধরতে হবে’!

কতো দেশ, কতোবার কাপ জিতলো, আমাদের ঘরে আর কাপ এলো না!

সংগীতাচার্য বড়ে গোলাম আলি খান, পশ্চিমবঙ্গের গর্ব সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় ও আমি

ইন্ডিয়ান বুদ্ধিজীবী, ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্র ও দেশের বুদ্ধিজীবী-অ্যাক্টিভিস্ট
