প্রভাষ আমিন: ১. বাংলাদেশের জাতীয় সংসদে আসন সংখ্যা ৩৫০টি। এরমধ্যে ৩০০ আসনে সরাসরি নির্বাচন হয়। বাকি ৫০টি আসন নারীদের জন্য সংরক্ষিত। সরাসরি নির্বাচনে বিজয়ীরা আনুপাতিক হারে নারী আসনে প্রার্থী মনোনয়ন দিতে পারে। সরাসরি আসনের প্রতি ৬টি আসনের বিপরীতে একটি নারী আসন পাওয়া যায়। গত ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত নির্বাচনে আওয়ামী লীগ জয় পেয়েছে ২২৩ আসনে। স্বতন্ত্ররা জিতেছেন ৬২টি আসনে। কিন্তু স্বতন্ত্র সদস্যরা তাদের প্রাপ্য সংরক্ষিত আসনে মনোনয়ন দেয়ার ক্ষমতা আওয়ামী সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দিয়েছেন। তাই সংরক্ষিত ৫০টি আসনের মধ্যে আওয়ামী লীগ মনোনয়ন দিতে পারবে ৪৮টি আসনে। আর ১১ আসনে জয় পাওয়া জাতীয় পার্টি পাবে দুটি আসন।

২. জাতীয় পার্টি দুটি আসনে কাকে মনোনয়ন দেবে তা নিয়ে খুব একটা উৎসাহ বা কৌতুহল নেই। ধারণা করা হচ্ছে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও সংসদে বিরোধী দলীয় নেতা জি এম কাদেরের স্ত্রী শেরীফা কাদের এবং জাতীয় পার্টির নেত্রী সালমা ইসলামই সংরক্ষিত নারী আসনে দলের মনোনয়ন পাবেন। অবশ্য এই দুজনই সরাসরি নির্বাচনে অংশ নিয়ে হেরে গেছেন।

৩. তবে আওয়ামী লীগের জন্য নির্ধারিত ৪৮টি আসনে কারা মনোনয়ন পাচ্ছেন, তা নিয়ে ব্যাপক আগ্রহ এবং কৌতুহল রয়েছে। গত ৬-৮ ফেব্রুয়ারি সংরক্ষিত আসনের জন্য মনোনয়নপত্র বিক্রি করে আওয়ামী লীগ। তিন দিনে মোট ১৫৫৩টি ফরম বিক্রি হয়েছে। তার মানে প্রতিটি আসনের জন্য ৩২ জন মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন। ফরম বিক্রি করেই আওয়ামী লীগের আয় হয়েছে ৭ কোটি ৭৬ লাখ ৫০ হাজার টাকা। মনোনয়ন পেতে আগ্রহীদের মধ্যে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেত্রীরা ছাড়াও রয়েছেন অভিনেত্রী, গায়িকা, উদ্যোক্তা, চিকিৎসকসহ বিভিন্ন শ্রেণি পেশার নারীরা।

৪. এরই মধ্যে নির্বাচন কমিশন সংরক্ষিত নারী আসনের নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেছে। ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী আগামী ১৮ ফেব্রুয়ারি সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত মনোনয়নপত্র জমা দেওয়া যাবে। মনোনয়নপত্র বাছাই হবে ১৯ ও ২০ ফেব্রুয়ারি। মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করা যাবে ২৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। আর আগামী ১৪ মার্চ নির্বাচন হবে। তবে নারী আসনের নির্বাচন একটি

আনুষ্ঠানিকতা মাত্র। তাই কারা নারী আসনের সংসদ সদস্য হচ্ছেন, তা জানতে ১৪ মার্চ পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে না। আওয়ামী লীগ আর জাতীয় পার্টির মনোনীতরাই নির্বাচিত হবেন, এটা নিশ্চিত। ২৫ ফেব্রুয়ারি মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের দিনেই আওয়ামী লীগ মনোনীত ৪৮ জন ও জাতীয় পার্টি মনোনীত ২ জন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়ে যাবেন।

৫. মাত্র ৪৮ জন মনোনয়ন পাবেন। তারমানে মনোনয়ন কেনা ১৫৫৩ জনের মধ্যে ১৫০৫ জনই বাদ পড়বেন। তারপরও কেন এত আগ্রহ? সবার চাওয়া, কোনো ভাবে শেখ হাসিনার দৃষ্টি আকর্ষণ করে একবার এমপি হতে পারলেই বদলে যাবে ভাগ্য। এ যেন লটারি জেতার মত ব্যাপার। তবে এই লটারির টিকেটের দাম ৫০ হাজার টাকা।

৬. মনোনয়ন পাবেন না জেনেও অনেকে মনোনয়ন ফরম কিনেছেন। তাদের লক্ষ্য ভবিষ্যতের জন্য নিজের পথ সহজ করে রাখা। নিজের নামটি আলোচনায় রাখা। আর মনোনয়ন না পেলেও যদি একবার প্রধানমন্ত্রীর সাক্ষাত পাওয়া যায়, এই আশা। 

৭. প্রধানমন্ত্রী তাদের নিরাশ করেননি। পহেলা ফাল্গুনে তিনি নারী আসনের মনোনয়ন প্রত্যাশীদের ডেকে পাঠান গণভবনে। প্রধানমন্ত্রী তাদের বলেছেন, এত বিপুলসংখ্যক মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মাঝ

থেকে ৪৮ জনকে বেছে নেয়াটা কঠিন কাজ। তবে যারা শেষ পর্যন্ত মনোনয়ন পাবেন না, তাদের নেতৃত্ব দেবার আকাক্সক্ষাটা যেন থেমে না যায়। গণভবনে উৎসবমুখর পরিবেশে সবাই প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য শুনেছেন। তবে খাওয়ার সময় একজন আরেকজনকে মজা করে বলছিলেন, ৫০ হাজার টাকা দামের বিরিয়ানী, যেন সবাই মজা করে খায়।

প্রভাষ আমিন: হেড অব নিউজ, এটিএন নিউজ, ১৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪