প্রকাশিত: Fri, Mar 8, 2024 12:52 AM
আপডেট: Mon, Jun 23, 2025 2:51 PM

ডাক্তার থাকিলে তো আসিবে

প্রভাষ আমিন: ১. ঢাকার বাইরের বিভিন্ন হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রে গিয়ে ডাক্তারদের পাওয়া যায় না, এ অভিযোগ অনেক পুরোনো। বাংলাদেশ ছোট্ট একটা দেশ, অনেক বেশি মানুষ। কিন্তু পুরো ব্যবস্থাটাই আমরা এমন কেন্দ্রীভূত করে রেখেছি, সবাই ঢাকায় থাকতে চায়, ঢাকায় আসতে চায়। উপজেলা বা জেলা পর্যায়ে ভালো চিকিৎসা পেলে মানুষ ঢাকায় ছুটে আসতো না। কিন্তু প্রান্তিক হাসপাতালগুলো মানুষের আস্থা অর্জন করতে পারেনি। তাই কিছু হলেই মানুষ ঢাকায় ছুটে আসেন।

২. ডাক্তার শুধু নয়, সব পেশার সরকারি কমকর্তা-কর্মচারিদেরই চাকরি জীবনের একটা অংশ ঢাকার বাইরে কাজ করতে হয়। কিন্তু কেউই ঢাকার বাইরে থাকতে চান না। পোস্টিং হওয়ার সাথে সাথে ঢাকায় বদলির তদ্বিরে লেগে যান। তবে ঢাকার বাইরে কর্মস্থলে না থাকার অভিযোগ সবচেয়ে বেশি ডাক্তারদের বিরুদ্ধে। ডিসি বা এসপি অফিসের কেউ অনুপস্থিত, এমন অভিযোগ খুব বেশি নেই। ডাক্তারদের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ সবচেয়ে বেশি।

৩. কর্মস্থলে ডাক্তারদের অনুপস্থিতির বিষয়টি সবচেয়ে ভালো জানেন ডাক্তাররাই। বর্তমান স্বাস্থ্যমন্ত্রী অধ্যাপক সামন্ত লাল সেন নিজেও একজন ডাক্তার। তাই এই অভিযোগটা তারও ভালোই জানা। গত মঙ্গলবার ঢাকায় এক অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্যমন্ত্রী সেই জানা কথাটাই বললেন, ‘চিকিৎসকদের নানা রকম  সমস্যা ও প্রতিকূলতা যে আছে, তা আমি জানি। কিন্তু মানুষকে চিকিৎসা তো দিতে হবে। জাতীয় সংসদে গেলে সংসদ সদস্যরা আমাকে বলেন, তার এলাকায় চিকিৎসক থাকে না। যেখানেই যাই, সেখানেই হাসপাতালে ডাক্তার থাকে না, শুনতে পাই। এগুলো তো ভালো কথা নয়। উপজেলা হাসপাতালে যদি ডাক্তার থাকতে না চায়, তাহলে গ্রামের মানুষ কোথা থেকে ভালো চিকিৎসা পাবে? আমি বারবার বলেছি, চিকিৎসা খাতে সুনাম ফিরিয়ে আনতে হলে আমাদেরকে প্রত্যন্ত অঞ্চলে চিকিৎসাসেবা পৌঁছে দিতে হবে।’

৪. পরদিন বুধবার সিলেটের জৈন্তাপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স

পরিদর্শনে গিয়ে হাতেনাতে এ অভিযোগের প্রমাণ পেলেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী

নিজেই। ক্ষুব্ধ স্বাস্থ্যমন্ত্রী তাৎক্ষণিকভাবে উপজেলা স্বাস্থ্য ও

পরিবার কল্যাণ কর্মকর্তা রেন্টু পুরকায়স্থকে বরখাস্ত করার নির্দেশ দেন। তবে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর পক্ষে তো আর সারা বাংলাদেশের সব হাসপাতাল পরিদর্শন করা সম্ভব নয়। তাই ডাক্তার অনুপস্থিতির সংস্কৃতিটাই বদলাতে হবে। কোনো সমস্যা থাকলে সেটা সমধান করতে হবে। কিন্তু যার যেখানে কাজ তাকে সেখানে থাকতেই হবে। 

৫. ডাক্তারদের অনুপস্থিতির মূল সমস্যাটাও স্বাস্থ্যমন্ত্রী দেখেছেন জৈন্তাপুরের হাসপাতালে। সরকারি হাসপাতালে ডাক্তারদের প্রাইভেট চেম্বারের বিজ্ঞাপন দেখে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন তিনি। বিস্ময়ের কিছু নেই। এটাই বাস্তবতা। ডাক্তাররা হাসপাতালের চেয়ে চেম্বারের প্রতি বেশি মনোযোগ দেয়াটাই মূল সমস্যা।

৬. হাসপাতালে ডাক্তারদের অনুপস্থিতি ও অমনোযোগিতায় কী হয়, তা জৈন্তাপুরের এই হাসপাতালেই দেখা গেছে। গত ১৯ জানুয়ারি সড়ক দুর্ঘটনার শিকার চার ছাত্রলীগ কর্মীর মৃত্যুর পর জৈন্তাপুরের এই হাসপাতালে ব্যাপক ভাংচুর চালায় বিক্ষুব্ধরা। সাধারণ মানুষের দীর্ঘদিনের ক্ষোভের প্রকাশ ঘটেছে সেদিন।

৭. ‘ডাক্তার আসিবার পূর্বেই রোগী মারা গেল’, ছেলেবেলায় এই অনুবাদ করতে গিয়ে আমরা অনেক গলদঘর্ম হয়েছি। তবে হাসপাতালে ডাক্তার না থাকার যে সংস্কৃতি গড়ে উঠেছে, তাতে অনুবাদটি বদলানোর সময় চলে এসেছে। এখন অনুবাদ করতে হবে- ডাক্তার থাকিলে তো আসিবে।

প্রভাষ আমিন: হেড অব নিউজ, এটিএন নিউজ