প্রকাশিত: Mon, Dec 26, 2022 3:32 PM
আপডেট: Sun, Jun 22, 2025 4:40 PM

সমাবর্তনে সবার সমান ভাবে অংশগ্রহণের সুযোগ কেন থাকবে না?

শারফিন শাহ্

প্রথম আলোয় পড়লাম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞানের এক ছাত্র ৪৩০০ টাকা জোগাড় করতে না পেরে সমাবর্তনে অংশগ্রহণ করতে পারেনি। বন্ধুদের গাউন ও হ্যাট ধার করে বাবার সাথে ছবি তুলেছে। এই ঘটনার প্রেক্ষিতে দেখতে পাচ্ছি, অনেকে বন্ধুদের ওপর দোষ চাপাচ্ছেন এই বলে, বন্ধুরা কী করলো? এই কটা টাকা তারা ধার হিসেবে দিতে পারলো না? প্রথম কথা হচ্ছে, ওই ছেলেটির যারা বন্ধু তাদেরও যে খুব বেশি পরিমাণ অর্থ-কড়ি আছে এমন না, কোনো কোটিপতির ছেলেমেয়ে তো আর ঢাবিতে পড়তে আসে না, পড়তে আসলেও মফস্বলের আটপৌরে ছেলেদের থেকে একধরনের দূরত্ব সবসময়ই বজায় রেখে চলে। এরা সবসময়ই নিজের উন্নয়ন চায়, তাই পাশের সহপাঠীর সঙ্গে সামান্য কথোপকথনের সময়ও হৃদয় উৎসারিত টান অনুভব করে না। যারা দূরদর্শী তারা এদের কাছ থেকে সবসময়ই দূরত্ব রেখে বিশ্ববিদ্যালয় জীবন শেষ করে। আমিও তাই করেছি, তবে বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে আমার বন্ধুদের মধ্যে যারা ছিলো তারা সবাই এখন মোটামুটি ভালো অবস্থানে। খুব অর্থকড়ি এদের না থাকলেও সুন্দর একটা হৃদয় আছে। এই হৃদয় না থাকলে আদতে সত্যিকারের মানুষ হওয়া যায় না। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে আমিও টিউশনি, সাংবাদিকতা, পার্টটাইম চাকরি করে কিছু আয় করার চেষ্টা করতাম। বন্ধুরা যখনই কোনো আর্থিক সংকটে পড়েছে, আমাকে জানানো মাত্রই পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেছি। কাউকে বেশ মোটা অঙ্কের ধারও দিয়েছি, অথচ আমি কিন্তু কোনো কোটিপতির সন্তান নই। যে দিতে চায়, তার যা আছে তা থেকেই দেয়, আর যে দিবে না বলে পণ করেছে, সে কোনোভাবেই দিবে না। সমাবর্তন মানে সমভাবে আবর্তন। এখানে সবারই সমভাবে অংশগ্রহণের সুযোগ কেন থাকবে না। ৪৩০০ টাকার মতো এতো বেশি পরিমাণ ফি-ইবা কেন নির্ধারণ করতে হবে? এই খবর পড়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম সমাবর্তনের কথা মনে পড়ছে। ১৯২৩ সাল। পূর্ববঙ্গের পিছিয়ে পড়া কৃষিজীবী মানুষের অবস্থার পরিবর্তনের নিমিত্তে প্রতিষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হবে। যথারীতি সবই প্রস্তুত। কিন্তু সমাবর্তনের দিন অবাক হওয়ার মতো ঘটনা দেখা দিলো। যারা সমাবর্তনের জন্য নিবন্ধন করেছিলো, তাদের মধ্যে কেউ উপস্থিত নেই। উপাচার্য পিজি হার্টগ জানতে পারলেন, যারা সমাবর্তনে অংশ নিবে তাদের ভালো জামাকাপড় নেই। তাই তারা আসেনি। হার্টগ অশ্রুসিক্ত হলেন। তারপর চটজলদি কাপড়-চোপড়ের ব্যবস্থা করে ছাত্রদের সমাবর্তনের অনুষ্ঠানে আনার ব্যবস্থা করলেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সেই অবস্থা এখনো আছে। এখান থেকে বেরিয়ে যারা উপরে উঠেছে তারা দেশমাতৃকার প্রতি দায়বদ্ধতার কথা বেমালুম ভুলে গেছে। এরা দেশে-বিদেশে কোটি কোটি টাকার পাহাড় গড়েছে, কিন্তু পিছিয়ে পড়া সমাজের জন্যে কিছু করেনি। আর এজন্যই একজন ছাত্র আজও টাকার জন্য সমাবর্তনের মতো অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করতে পারে না। হার্টগ সাহেবের মতো দয়ালু উপাচার্যও যেহেতু নেই, তাই এদের সমাবর্তন করতে হয় বন্ধুর গাউন পরেই। লেখক: গবেষক ও প্রাবন্ধিক