প্রকাশিত: Mon, Dec 26, 2022 3:33 PM
আপডেট: Sun, Jun 22, 2025 4:40 PM

আওয়ামী লীগ এখন ‘বিগতযৌবনা’ নারীর মতো!

রহমান বর্ণিল

আওয়ামী লীগ এখন ‘বিগতযৌবনা’ নারীর মতো! দেখতে স্থুলকায়, কার্যত নিস্ফলা। দেশের সর্বত্রই এখন আওয়ামী লীগের অতিকায় চেহারা দেখা গেলেও আদত আওয়ামী লীগ আছে দলটির সৃষ্টির ইতিহাসের সবচেয়ে নাজুক অবস্থায়। ২৪ ডিসেম্বর আওয়ামী লীগের ঘোষিত নতুন কমিটির দিকে তাকালে কথাটির সঙ্গে আপনি দ্বিমত করতে পারবেন না। আওয়ামী লীগ তার বিগত কমিটির (গুটিকয়েক ব্যতিক্রম বাদে) প্রায় সবগুলো পদ নতুন কমিটিতে অপরিবর্তিত রেখেছে। নতুন নেতৃত্ব না আসায় যাদের সুবিধা হয়েছে তারা খুশি হয়েছে। অপরদিকে নব্য আওয়ামী লীগের দ্বারা যারা কোণঠাসা হয়ে এতোদিন ধরে নিজেদের ভাগ্য পরিবর্তনের স্বপ্ন দেখে আসছিলেন, আশাহত হয়ে তাদের দুঃখ করতে দেখা যাচ্ছে। কিন্তু যে দুঃখটি সকলেরই করার কথা সেটা হচ্ছে দলটিতে এতগুলো বছরে নতুন কোনো নেতৃত্ব তৈরি হয়নি। অথচ সেই দুঃখটি কাউকে করতে দেখছি না। সৈয়দ আশরাফের মতো ডাকসাইটের নেতার জীবদ্দশায় তাকে সেক্রেটারি পদ থেকে সরানো হয়েছিলো। কারণ ততোদিনে ওবায়দুল কাদেরের মতো নেতা তৈরি হয়ে গিয়েছিলো। কিন্তু ওবায়দুল কাদের সাহেব এখন শারীরিকভাবে অক্ষম এবং নানানভাবে বিতর্কিত। কিন্তু তা সত্ত্বেও তাকে দলটি তৃতীয় বারের মতো স্বপদে বহাল রেখেছে। কারণ বিগত নয় বছরে দলের হাল ধরার মতো আর কোনো নেতা আওয়ামী লীগে তৈরি হয়নি। এ তো গেলো কেবলমাত্র আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় পর্যায়ের দৃশ্য। তৃণমূল পর্যায়ে দলটির অবস্থা আরও ভয়াবহ। হাটে-ঘাটে, মাঠে-ময়দানে, ঝুপড়িতে-খুপড়িতে বর্তমানে পিঁপড়ার চেয়ে বেশি আওয়ামী লীগ পড়ে পায়ের নীচে। 

কিন্তু এরা আওয়ামী লীগ বা এর অঙ্গসংগঠনের কেবল নামটাই ভাঙিয়ে খায়। দলের পরিচয়টা এদের পোশাকী। বাস্তবতা হচ্ছে এরা কেউই আওয়ামী লীগকে ধারণ করে না। দল ক্ষমতায় আসার সাথে সাথে এরাও ভাসমান কচুরিপানার মতো দলে এসে জুটেছে। দল ক্ষমতার বাইরে গেলে এরা কর্পুরের মতো হাওয়া হয়ে যাবে। প্রকৃত বঙ্গবন্ধুর আদর্শের আওয়ামী লীগ এখন আর তৈরি হচ্ছে না। তাই দলপ্রধানও ভরশা রাখতে পারছে না কারো ওপর। ভরসা রাখবেইবা কী করে? দুর্নীতির অভিযোগে শোভন-রাব্বানীকে বাদ দিয়ে ছাত্রলীগকে থুলে দিয়েছিল জয়-লেখকের হাতে। অথচ এই দুই চিরিয়া যে পরিমাণ দুর্নীতি করেছে, সেটা বোধহয় বাংলাদেশ ছাত্রলীগের ইতিহাসে আর কেউ করার হিম্মত দেখায়নি।

যে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে দীর্ঘ রাজনীতিক সংগ্রাম আর রণাঙ্গনের লড়াইয়ে মধ্য দিয়ে একদা কলোনিয়াল শোষণ থেকে মুক্ত হয়ে আস্ত একটা রাষ্ট্র গড়ে উঠেছিলো, আজ সেই আওয়ামী লীগের নাম ভাঙিয়ে একজন ফুটপাতের ব্যবসায়ীর গলায় ফাঁড়া দিয়ে হপ্তা আদায় হয়। অনাদায়ে তার দোকানের মালমাল তুলে নেয়। নেতারা বঙ্গবন্ধুর দলটির পদ বাণিজ্য করে শতকোটি টাকায়। অসাম্প্রদায়িক মতাদর্শ আর সমাজতান্ত্রিক চরিত্রে গড়ে ওঠা বঙ্গবন্ধুর দলটির এই রুগ্ন দশা, এমন আদর্শিক মৃত্যু শুধু আওয়ামী লীগের জন্য নয়, এটা ভয়াবহ অশনীসংকেত গেটা জাতির জন্যও। কারণ আওয়ামী লীগের ইতিহাস কেবলমাত্র একটা রাজনীতিক দলের ইতিহাসই নয়। দলটির ইতিহাস আর বাংলাদেশের ইতিহাস সমুচ্চারিত, এক এবং অভিন্ন।