
প্রকাশিত: Fri, Mar 22, 2024 11:57 AM আপডেট: Mon, Jun 23, 2025 2:32 PM
আমরা এখনো বর্ণবাদ আর সাম্প্রদায়িকতামুক্ত সমাজ গঠনের জন্য কাজ শুরুই করিনি
ওমর ফারুক লুক্স: হিন্দু ধর্মের 'বর্ণপ্রথা' যে এই সভ্য বিশ্বের সবচেয়ে বড় বর্ণবাদ আর সাম্প্রদায়িকতার খনি, এটা আপনি ভারতীয় উপমহাদেশের বেশীরভাগ হিন্দুদেরকে বোঝাতেই পারবেন না। কারণ, হিন্দুরা এই বর্ণপ্রথাকে তাদের ভগবান প্রদত্ত অনুশাসন বলে বিশ্বাস করে।
ইসলাম ধর্মই সকল ধর্মের সেরা এবং একমাত্র সত্য ধর্ম। বাকি ধর্মের অনুসারীরা সবাই অপবিত্র, কাফের আর দোজখে যাবে।- এটাও যে এই আধুনিক সময়ে সবচেয়ে বিপদজনক সাম্প্রদায়িক মনোভাব, সেটাও আপনি বিশ্বের বেশীরভাগ মুসলমানদেরকে বোঝাতে পারবেন না। কারণ, এসব তাদের ধর্মগ্রন্থে লেখা আছে।
আমেরিকা আর ইয়োরোপের আধুনিক গণতান্ত্রিক আর ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রগুলোতেও বর্ণবাদ আর সাম্প্রদায়িকতাকে একটা বিরাট সমস্যা হিসেবে দেখা হয়। তবে সুখের কথা হচ্ছে, আমেরিকা আর ইয়োরোপের জনগণ বর্ণবাদ আর সাম্প্রদায়িকতাকে সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করতে পেরেছে। এসব মহাদেশে একজন মহা ক্ষমতাশীল নাগরিককেও তার সামান্যতম বর্ণবাদী আর সাম্প্রদায়িক আচরণের কারণে শাস্তি পেতে হয়। নিদেনপক্ষে অপরাধী তার ভুল স্বীকার করতে বাধ্য হন এবং ক্ষমা প্রার্থনা করেন।
ভারতীয় উপমহাদেশে বর্ণবাদ আর সাম্প্রদায়িকতাকে রাষ্ট্রীয়ভাবে এখনো সমস্যা হিসেবেই চিহ্নিত করা হয়নি, আর তার সমাধানের উদ্যোগ তো বহু দূরের কথা। ভারতে উচ্চবর্ণ-নিম্নবর্ণের নামে মানুষকে আজীবন দাস করে রাখা, কিংবা একই দেশের নাগরিক হওয়া সত্বেও একবর্ণের মানুষ আরেক বর্ণের মানুষের ছায়া না মাড়ানোকে যেমন সংস্কৃতি হিসেবে লালন করা হয়; তেমনি বাংলাদেশে আর পাকিস্তানে ওয়াজ মাহফিলে প্রকাশ্যে হিন্দুদের উপর প্রতিনিয়ত ঘৃণা আর গজব ঢালা, এমনকি হিন্দুদের বাড়িঘরে আগুন দিয়ে দেশছাড়া করাকেও সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানদের ধর্মীয় অধিকার হিসেবে চর্চা করা হয়। আরো ভয়ংকর হচ্ছে- হিন্দুদের উপর মুসলমানদের এসব আক্রমণ আর হামলাকে রাষ্ট্রীয়ভাবে সাম্প্রদায়িক হামলা বলে স্বীকারই করা হয়না। এসব ঘটনাকে সন্ত্রাসী ঘটনা বলে চালিয়ে দেয়া হয়।
ভারতীয় উপমহাদেশের বর্ণপ্রথা, সংখ্যালঘু হিন্দুদের ঘরে মুসলমানদের প্রতিনিয়ত আগুন, ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের উপর দলবদ্ধ হয়ে ঘৃণা, বিদ্বেষ আর গজব ঢালা সংস্কৃতিতে যে অঞ্চলের শত কোটি মানুষ হাজার হাজার বছর ধরে অভ্যস্ত হয়ে গেছে, সে অঞ্চলের সিংহভাগ মানুষ হয়তো আর কখনোই বুঝতে পারবে না যে, অন্যের ধর্মীয় পরিচয় জানার পর তার প্রতি শ্রদ্ধা হারানো- এই সুক্ষ্ম আচরণটাও একটা সাম্প্রদায়িক মনোভাবের বহিঃপ্রকাশ। আর ভারতীয় উপমহাদেশে মানুষের এটা না বোঝার প্রধান কারণ হচ্ছে, ভারতীয় উপমহাদেশে এখনো রেনেসাঁসই হয়নি। ভারতীয় উপমহাদেশের মানুষ এখানো ধর্মনিরপেক্ষতাই বোঝেনি।
বর্ণবাদ আর সাম্প্রদায়িকতামুক্ত সমাজ তৈরি হয় ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র গঠনের মাধ্যমে। আর একটা ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র গঠিত হয় রেনেসাঁসের পর ৫ শত বছর ধরে আধুনিক শিক্ষা ব্যবস্থা, গণতন্ত্র আর মতপ্রকাশের স্বাধীনতা চর্চার মাধ্যমে। অতএব, আমরা এখনো বর্ণবাদ আর সাম্প্রদায়িকতামুক্ত সমাজ গঠনের জন্য কাজ শুরুই করিনি।
২১শে মার্চ বিশ্ব বর্ণবাদ নির্মূল দিবস। মানুষের এই পৃথিবী বর্ণবাদ আর বৈষম্য থেকে মুক্ত হোক।
ওমর ফারুক লুক্স: জার্মানী প্রবাসী বাংলাদেশী ব্লগার, ফেসবুক: যঃঃঢ়ং://িি.িভধপবনড়ড়শ.পড়স/ড়সধৎভধৎড়ড়য়.ষীঁ
আরও সংবাদ
চ্যাম্পিয়ন ভারত : একটা ছোট মুহূর্ত কতো বড় পার্থক্য গড়ে দিতে পারে
‘ওই ক্যাচ হয়নি, সুরিয়াকুমারকে আবার ক্যাচ ধরতে হবে’!
কতো দেশ, কতোবার কাপ জিতলো, আমাদের ঘরে আর কাপ এলো না!
সংগীতাচার্য বড়ে গোলাম আলি খান, পশ্চিমবঙ্গের গর্ব সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় ও আমি
ইন্ডিয়ান বুদ্ধিজীবী, ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্র ও দেশের বুদ্ধিজীবী-অ্যাক্টিভিস্ট
মতিউর প্রতিদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ৮৩ ব্যাচের বন্ধুদের গ্রুপে সৎ জীবন যাপনের উপদেশ দিতেন!

চ্যাম্পিয়ন ভারত : একটা ছোট মুহূর্ত কতো বড় পার্থক্য গড়ে দিতে পারে

‘ওই ক্যাচ হয়নি, সুরিয়াকুমারকে আবার ক্যাচ ধরতে হবে’!

কতো দেশ, কতোবার কাপ জিতলো, আমাদের ঘরে আর কাপ এলো না!

সংগীতাচার্য বড়ে গোলাম আলি খান, পশ্চিমবঙ্গের গর্ব সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় ও আমি

ইন্ডিয়ান বুদ্ধিজীবী, ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্র ও দেশের বুদ্ধিজীবী-অ্যাক্টিভিস্ট
