
প্রকাশিত: Sat, May 4, 2024 2:43 PM আপডেট: Mon, Jun 23, 2025 4:45 AM
উন্নত বিশ্বে রাজনীতি ও সমাজকর্মকে বাড়তি যোগ্যতা হিসেবে মূল্যায়ন করা হয়
মঞ্জুরে খোদা টরিক : আমাদের দেশে রাজনীতি ও সামাজিক কাজকর্মকে অত্যন্ত নেতিবাচকভাবে দেখা হয়। বিশেষ করে ছাত্ররাজনীতিকে। এসব কাজকে ঘরের খেয়ে বনের মোষ তাড়ানো মনে করা হয়। কিন্তু উন্নত বিশ্বে রাজনীতি ও সমাজকর্মকে একটি বড় গুণ ও অভিজ্ঞতার বিষয় হিসেবে বিবেচনা করা হয়। একজন শিক্ষার্থী কত বছর এই কাজের অভিজ্ঞতা অর্জন করেছে তার উপর ভিত্তি করে তার দক্ষতা, যোগ্যতা ও সক্ষমতার একটা মূল্যায়ন তৈরি করা হয়। এগুলোর ভিত্তিতে একজন শিক্ষার্থী বা নাগরিক বাড়তি ক্রেডিটও পেতে পারেন, চাকরির ক্ষেত্রেও বাড়তি সুবিধা পেতে পারেন। সভ্য দুনিয়ায় এটা খুব স্বাভাবিক ও সাধারণ একটি ঘটনা ও প্রবণতা।
এমনকি লেখালেখি ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডকেও একটি বড় ধরনের দক্ষতা ও যোগ্যতা হিসেবে গণ্য করা হয়। আমি ফেসবুকের লেখালেখির কথা বলছি না। আমাদের তারুণ্যে ফেসবুক বলে কিছু ছিল না। আমি বলছি, স্বীকৃত মাধ্যমে প্রকাশিত বিষয়ভিত্তিক নানা গঠনমূলক লেখা-মতামতকে সবিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়। জাপানে লেখাপড়া-গবেষণা করতে যেয়ে আমি এই কর্মের সুফল পেয়েছি, সুবিধাভোগী হয়েছি। কীভাবে?
বাংলাদেশে সাধারণত আমরা মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করি ১৬ শিক্ষাবছরে। কিন্তু উন্নত সব দেশেই মাস্টার্স ১৭ শিক্ষাবর্ষের বিষয়। সেই হিসেবে শিক্ষাক্ষেত্রে আমার এক বছরের ঘাটতি ছিল। আমার সেই এক বছরের ঘাটতি পূরণে আমার রাজনৈতিক ও সামাজিক কর্মকাণ্ড গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। আমার প্রফেসর মাতসুগি তাকাসি আমাকে এক সাক্ষাতকারে জিজ্ঞেস করলেন, ‘তুমি লেখাপড়ার পাশাপাশি কী ধরনের কর্মকাণ্ডের সাথে যুক্ত ছিলে?’ আমি উনাকে বললাম, ‘আমি রাজনীতি, সামাজিক কর্মকাণ্ড ও লেখালেখির সাথে যুক্ত ছিলাম।’ তারপর তিনি আমার রাজনৈতিক ও সামাজিক কর্মকাণ্ডের সংক্ষিপ্ত তথ্য নিলেন। বিশেষ করে কতদিন এসব কাজের সাথে যুক্ত ছিলাম। আমার লেখালেখি নিয়ে জানতে চাইলেন। কী বিষয়ে লেখালেখি করেছি, সেটাও জানতে চাইলেন আমার প্রফেসব? আমি বললাম, প্রধানত শিক্ষা, সমাজ, রাজনীতি, উন্নয়ন বিষয়ে লিখেছি। তিনি আমাকে বললেন, ‘তুমি যে এই সব কাজকর্ম, লেখালেখি করেছো তার কি কোনো তথ্য-প্রমাণ তোমার কাছে আছে?’ আমি বললাম, অবশ্যই আমার কাছে সে সব কাজের তথ্য আছে।
[১] আমার রাজনৈতিক ও সামাজিক কর্মকাণ্ডের ছবি, প্রকাশিত সংবাদ, পোস্টার, কার্ড উনাকে দেখালাম। উনি সেগুলো মনোযোগ দিয়ে দেখলেন। [২] অতপর আমার লেখালেখি দেখতে চাইলেন। আমার কাছে সংরক্ষিত থাকা বিভিন্ন পত্রিকার প্রকাশিত কলাম, মতামত, উপসম্পাদকীয় উনাকে দেখালাম। তিনি আমাকে বললেন, ‘এখন পর্যন্ত কতগুলো কলাম-মতামত লিখেছো?’ আমি বললাম, একশর উপরে হবে। তিনি বললেন, ‘প্রতি কলামে আনুমানিক কতগুলো করে শব্দ হবে?’ আমি বললাম, ১ হাজার থেকে ১২শ শব্দ হবে। তিনি তাৎক্ষণিক হিসেব করে বলে দিলেন যে, তার মানে প্রায় ৪শ পৃষ্ঠার একটা বই হবে? আমি বললাম, জ্বি সব মিলে যোগ করলে তাই হবে।
কয়েকটি বাদে আমার সেসব লেখালেখিগুলো ছিল বাংলায়। তিনি বললেন, ‘তুমি তোমার লেখালেখির বিষয়ে ইংরেজিতে আমাকে বিস্তারিত একটা নোট লিখে দাও।’ আমি সেটা করে আমার প্রফেসরকে দিলাম। তিনি আমার সামগ্রিক কাজকর্মকে মূল্যায়ন করে আমাকে কিছু ক্রেডিট দিলেন এবং আমাকে বললেন, ‘ঠিক আছে তোমার আর নতুন করে মাস্টার্স করতে হবে না। এক বছর রিসার্চ স্টুডেন্ট হিসেবে অধ্যায়ন করে তুমি সরাসরি পিএইচডিতে ভর্তি হয়ে যেতে পারবে এবং সেটাই হলো। না হলে আমাকে নতুন করে দুই বছর ধরে আরেকটি মাস্টার্স করতে হতো।
কেন লেখাপড়া ও পাঠ্যক্রমের বাইরে এই কাজগুলোকে বাড়তি যোগ্যতা হিসেবে দেখা হয়? সেটা দেখার কারণ তাঁরা মনে করেন এই সব কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে একজন ব্যক্তি নেতৃত্বের গুণাবলী, সামাজিক যোগাযোগের (ইন্টার পারসোনাল স্কিল) দক্ষতা, দলগত কর্মের অভিজ্ঞতা, পর্যবেক্ষণ ক্ষমতা ও ব্যক্তিত্বের বিকাশ ঘটাতে পারে। যেসব অভিজ্ঞতা ও গুণাবলী পেশাগত ও প্রায়োগিক জীবনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। অতএব যে সব শিক্ষার্থী ও অবিভাবক মনে করেন যে, রাজনৈতিক ও সামাজিক-সাংস্কৃতিক করলে নিছক সময় নষ্ট, লেখাপড়ার ক্ষতি হয় বিষয়টি আসলে তা নয়। এগুলো কোনোভাবেই ডিসক্রেডিট নয় বরং ক্রেডিট। বাংলাদেশে এমনটা মনে করা হলেও বিদেশে লেখাপড়া ও চাকরির ক্ষেত্রে এগুলোকে ‘লিডারসিপ কোয়ালিটি, ক্যাপাবিলিটি, রিসপনসিবিলিটি’ হিসেবে বাড়াতি যোগ্যতা হিসেবে দেখা হয় এবং এই অভিজ্ঞতা যাদের আছে তারা এক্ষেত্রে বাড়তি সুবিধা পান। অতএব যারা লেখাপড়ার বাইরে এই কাজগুলোকে নেতিবাচক বিষয় হিসেবে দেখেন তারা ভুল জানেন, ভুল ধারণা পোষণ করেন। লেখক ও গবেষক
আরও সংবাদ
চ্যাম্পিয়ন ভারত : একটা ছোট মুহূর্ত কতো বড় পার্থক্য গড়ে দিতে পারে
‘ওই ক্যাচ হয়নি, সুরিয়াকুমারকে আবার ক্যাচ ধরতে হবে’!
কতো দেশ, কতোবার কাপ জিতলো, আমাদের ঘরে আর কাপ এলো না!
সংগীতাচার্য বড়ে গোলাম আলি খান, পশ্চিমবঙ্গের গর্ব সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় ও আমি
ইন্ডিয়ান বুদ্ধিজীবী, ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্র ও দেশের বুদ্ধিজীবী-অ্যাক্টিভিস্ট
মতিউর প্রতিদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ৮৩ ব্যাচের বন্ধুদের গ্রুপে সৎ জীবন যাপনের উপদেশ দিতেন!

চ্যাম্পিয়ন ভারত : একটা ছোট মুহূর্ত কতো বড় পার্থক্য গড়ে দিতে পারে

‘ওই ক্যাচ হয়নি, সুরিয়াকুমারকে আবার ক্যাচ ধরতে হবে’!

কতো দেশ, কতোবার কাপ জিতলো, আমাদের ঘরে আর কাপ এলো না!

সংগীতাচার্য বড়ে গোলাম আলি খান, পশ্চিমবঙ্গের গর্ব সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় ও আমি

ইন্ডিয়ান বুদ্ধিজীবী, ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্র ও দেশের বুদ্ধিজীবী-অ্যাক্টিভিস্ট
