প্রকাশিত: Sat, May 4, 2024 2:51 PM
আপডেট: Mon, Jun 23, 2025 12:48 AM

মে দিবস, সাংবাদিকের আত্মা, সম্পাদকের প্রেতাত্মা!

হাসান শান্তনু : মহামানব’ পর্যায়ের এক ‘আলহাজ সম্পাদক, মালিকের’ পত্রিকায় সাংবাদিকতার ‘সৌভাগ্য’ হয়েছিলো জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক সঞ্জীব চৌধুরীর। প্রথম মাসে তাঁর বেতন ছিলো দেড়শ টাকা (আনুমানিক)। মাস শেষে বেতন চাইতে গেলে সম্পাদক বেশ ‘অবাক’ হয়ে তাঁকে বলেন, ‘আপনার মতো মেধাবী সাংবাদিককে মাত্র দেড়শ টাকা দিচ্ছি! সম্পাদক হিসেবে আমি এতো খারাপ। আগামী মাস থেকে আপনার বেতন তিনশ টাকা।’

চাকরির আট মাস কেটে যায়। এক পয়সাও বেতন পাননি সঞ্জীব দা। সম্পাদকের কাছে বেতন চাইতে গেলে শুধু টাকার পরিমাণ বাড়ে, একটা পয়সাও মেলে না। নয় মাস পর এক পূজা বা ঈদের আগে (ওই বছর পূজা, ঈদ কাছাকাছি সময়ে ছিলো) আবার তিনি বেতনের জন্য যান। বরাবরের মতো টাকা না দিয়ে সম্পাদক জানতে চাইলেন, ‘আপনার বেতন জানি কতো?’ সঞ্জীব দা জানালেন, ‘এক হাজার টাকা।’ এ কথা শোনে যেন ‘আকাশ থেকে ফের পতিত’ হলেন ওই ‘আলহাজ সম্পাদক’। নিজের প্রতি ‘অবজ্ঞা’ প্রকাশ করে বললেন, ‘সম্পাদক হিসেবে আমি এতো ছোটলোক? আপনার মতো প্রতিভাবানকে মাত্র এক হাজার টাকা বেতন দিচ্ছি! আমাকে একটু অনুশোচনার সুযোগ দিন। আর আগামী মাস থেকে আপনার বেতন দেড় হাজার টাকা।’

সেই ‘আগামী’ মাস অবশ্য আর আসেনি। সঞ্জীব চৌধুরীর বেতনও মেলেনি। ঘটনাটি অনেক বছর আগের, তাঁর মুখেই শুনেছিলাম। ২০১৭ সালে তিনি মারা গেছেন। শেষ বয়সে তিনি সাংবাদিকতা ছেড়ে রাজনীতিতে যুক্ত হন। মে দিবস সাংবাদিকদের কাছে কতো জরুরি, তা বোঝাতে একটা চুটকি শোনা হোক। প্রথম বন্ধু বলছে,  ‘একদিন একটা রাস্তা দিয়ে এক সাংবাদিক, এক গরিব লোক, এক সুপারম্যান ও বউয়ের ভয়ে ভীত নন, এমন ব্যক্তি হেঁটে যাচ্ছিলেন। রাস্তায় একটা এক হাজার টাকার নোট পড়ে আছে। প্রশ্ন হলো, টাকাটা কে কুড়িয়ে পাবেন?’ 

দ্বিতীয় বন্ধু বললো, ‘অবশ্যই টাকাটা পাবেন সাংবাদিক। এ দেশে এখন আর কোনো গরিব নেই। সাংবাদিক ছাড়া বাকি তিনটি চরিত্রই কাল্পনিক’। সঞ্জীব দা’র (তিনি পরে যুগান্তর, আমার দেশ, নিউ নেশন পত্রিকায় ছিলেন) সেই সম্পাদক এখন বেঁচে নেই, তিনি ‘বেহেশতে’ আশ্রয় নিতে পেরেছেন কি না, জানি না। তবে তার প্রেতাত্মা মালিক, সম্পাদকরা এ দেশের সাংবাদিকতায় এখনো আছেন। এ দেশেও প্রতিবছর মে দিবস আসে। সঞ্জীব দা’র আত্মার শান্তি কামনা। লেখক: সাংবাদিক। ফেসবুক থেকে