প্রকাশিত: Sat, May 4, 2024 2:52 PM
আপডেট: Mon, Jun 23, 2025 1:13 AM

সত্যজিৎ রায়ের উপস্থিতি, তাঁর প্রসঙ্গ ফুরায় না; কেবল এগিয়েই চলে, প্রজন্মের পর প্রজন্মে

হাসনাথ এ কালাম : মেধা ও ব্যক্তিত্বের উচ্চতায় বাঙালির যে গড় স্কেল, ওই থেকে কত  বড় ছিলেন সত্যজিৎ। এখনও তাঁর কোনো সৃষ্টিকর্মে সামনে এলেই উপলব্ধি হয়। সাহিত্য, আঁকা, গান, ফটোগ্রাফি, আর চলচ্চিত্রÑ সবকিছুতেই ছাপিয়ে গেছেন মিডিওকোর বাঙালির গন্ডি। তাঁর করা গ্রন্থ?প্রচ্ছদ, ইলাস্ট্রেশন, পোস্টার দেখে আমরা মুগ্ধ হই। এতো প্রজন্ম পরেও। বিশ্বসেরা পরিচালক আকিরা কুরোসাওয়া একবার বলেছিলেন, ‘?যিনি সত্যজিৎ রায়ের চলচ্চিত্র কখনও দেখেননি, তিনি যেন এই পৃথিবীতে বাস করেও সূর্য এবং চন্দ্র দেখার আনন্দ থেকে বঞ্চিত করেছেন নিজেকে।’?

সংগীত-সুর, ফিল্মোগ্রাফি- সবকিছুতেই নিজের স্বতন্ত্র মুন্সীয়ানার ছাপ ছিল। চিত্রনাট্য, অভিনেতা-অভিনেত্রী নির্বাচন, তাঁদের পোশাক, সেট ডিজাইনের নকশা থেকে শুরু করে ছবির পোস্টার— সবকিছু। কাহিনিও কি বদলাননি? নরেন্দ্রনাথ মিত্রের গল্প ‘অবতরণিকা’ অবলম্বনে ছবি বানিয়েছিলেন। সেখানে স্বামীর আচমকা চাকরি চলে যাওয়ার পর সকলের আপত্তি এড়িয়ে নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারের শিক্ষিত ও দৃঢ়চেতা গৃহবধূ আরতির চাকরি করা এবং কর্মস্থলে মহিলা সহকর্মীকে অন্যায়ভাবে ছাঁটাই হতে দেখে প্রতিবাদ করে চাকরি ছেড়ে আসাকে আমরা প্রশংসিত হতে দেখি না। বরং নরেন মিত্তিরের গল্পের কাহিনি শেষ হয়-ঘরে ফেরার পর স্বামী সুব্রতের বিদ্রুপ, শাশুড়ির কটূক্তি ও আরতির ভেঙে পড়া কান্নায়।

অন্য দিকে, এই গল্প অলম্বনে সত্যজিৎ ‘মহানগর’  বানালেন। সেই একই দৃশ্যে-অফিস থেকে বেরিয়েই আরতির সঙ্গে সুব্রতের হঠাৎ দেখা হয়ে যায় এবং পুরোটা শুনে সুব্রত বলে, ‘তুমি যা পেরেছ, তা হয়তো আমি পারতামই না। আমার সে সাহসই হতো না। রোজগারের তাগিদে আমরা ভীতু হয়ে গিয়েছি... জানো, আজ আমাদের এতো দুর্দিন, আজ বাদে কাল কী হবে কিছু ঠিক নেই... তবু আমার ভালো লাগছে।’ হতাশাবাদী মধ্যবিত্ত গন্ডির বাইরে এই আশাবাদ তিনি দিতে চাইছিলেন। এই আশাবাদটুকু ছিল সময়ের প্রয়োজনে। নৈতিক মূল্যবোধের অবক্ষয় তো আছে, উনার ছবি  শাখাপ্রশাখা’ও আছে। সমাজ ব্যক্তির উপর ঝেঁকে বসছে , উনার  ‘গণশত্রু’ আছে।  রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস ও দেশে বিদেশে ফ্যাসিবাদ আমাদের জীবনে, উনার ‘হীরক রাজার দেশে’ প্রাসঙ্গিক। উগ্র জাতীয়তাবাদ বনাম মানবতাবাদ আজ নতুন প্যারাডাইমে এসেছে, উনার ‘ঘরে-বাইরে’  আছে। আর এই গরমে প্রাণপণে চাইছি গাছের ছায়া; অথচ অরণ্যকে কেটে তৈরী করেছি কংক্রিটের দোযখ। সভ্যতার এই হিপোক্রেসির কালে তাঁর  ‘আগন্তুক’ আরও বেশি প্রাসঙ্গিক। সত্যজিৎ রায়ের উপস্থিতি, তাঁর প্রসঙ্গ ফুরায় না; কেবল এগিয়েই চলে। প্রজন্মের পর প্রজন্মে। ২-৫-২৪। ফেসবুক থেকে