প্রকাশিত: Mon, May 6, 2024 1:16 PM
আপডেট: Mon, Jun 23, 2025 1:19 AM

স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে হলে সুরক্ষিত রাখতে হবে জনগণকে

দীপক চৌধুরী : চারদিকে অসামঞ্জস্যতা বলে যারা চিৎকার করে চলেছেন তাদের সঙ্গে মানুষ নেই। মানুষ অবাস্তব কথাবার্তা শুনতে চায় না। উন্নয়ন চায়, অগ্রগতি কামনা করে তবে দুর্নীতি চিরতরে বন্ধ হোক চায়। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কীভাবে মানুষের বন্ধু হয়ে উঠেছিলেন এটা সাধারণ চোখে দেখলেই বোঝা যায়। তিনি দুর্নীতির বিরুদ্ধে বলেই থেমে থাকেননি। তিনি দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছিলেন। কঠোর হতে পেরেছিলেন। আমি বলবো না, এখন দুর্নীতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। হচ্ছে তবে আরো কঠোর হতে হবে। বঙ্গবন্ধুর শাসনামলের মতো সেরকম কঠোরতা এখন খুব দরকার। মুধু তাই নয়, সকল ক্ষেত্রে। ধান এবার বাম্পার উৎপাদন হয়েছে। কিন্তু উৎপাদক কৃষক আর ভোক্তাদের স্বার্থ দেখছি না কেন? ধানী জমিতে কৃষকের জমি কেটে প্রভাবশারীরা পুকুর করছে। প্রশাসনের একশ্রেণির মানুষ দেখেছে আর জানালার দিকে অথবা আকাশের তাকিয়ে সময় পার করছে। পকেটে কত এলো এটাই যেন একমাত্র দর্শন! পুকুর ভরাট করা হচ্ছে কিন্তু ব্যবস্থা নেই।

 সুনামগঞ্জের কথা বলি। সেখানে নদীকে বিল বানিয়ে উন্নয়ন স্কীমে লিজ দেওয়া হচ্ছে। এটা কীভাবে সম্ভব? এভাবে কী  দেশের উন্নয়ন হয়? উন্নয়ন প্রকল্পের নামে কী হচ্ছে তা যেন দেখার কেউ নেই। নদীকে বিল বানিয়ে উন্নয়ন প্রকল্পে ইজারা দেওয়ার মতো নিষ্ঠুরতা তো মৎস্যজীবীদের সঙ্গে প্রহসন করা! কিন্তু অবিশ^াস্য এসব ঘটনা ঘটেই চলেছে এটাই সত্য। সুনামগঞ্জের প্রকৃত মৎস্যজীবীরা অসহায়। দিরাই উপজেলার ভাটিধলের মৎস্যজীবীরা ভীষণ কষ্টে। অবাক হই। কেউ তাদের পাশে দাঁড়ায় না। তাদের কষ্টের কথা শুনতে পায় না। মিষ্টি পানির মাছ শেষ হয়ে যাচ্ছে। নদী-হাওরের জন্য প্রসিদ্ধ অঞ্চল হিসেবে পরিচিত সুনামগঞ্জে মাছ নেই। মাছের আকাল। শয়তান খালী নদী হিসেবে পরিচিত (কালনী নদী) কীভাবে বিল বানিয়ে লীজ দেওয়া হলো? একবারও কী কোনোমন্ত্রী বা এমপি নিজের চোখে গিয়ে দেখেছেন? অপরিকল্পিত বেড়িবাঁধ তৈরি করে হাওরের  বৈশিষ্ট্য নষ্ট করে দেওয়া হয়েছে। হাওরের মধ্যখানে রাস্তা এটা কী করে হয়?  চরিত্র নষ্ট করেছে। এককথায় হাওর-নদীকে ধর্ষণ করা হয়েছে যেন। প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে একা একা সবকিছু সামাল দেওয়া সম্ভব কি?       

এদেশে অনেক কিছুই করা হচ্ছে যা দেশের মানুষের কাজে আসে না। পত্রিকায় দেখলাম,  উপকূলের কাজ নাকি আট বছরেও শেষ হচ্ছে না। কেন এতোদিন লাগছে? দেখভাল করার দায়িত্ব কাদের? তারা কেন চুপচাপ? কারণ স্বার্থ। একটি অনুষ্ঠানে বঙ্গবন্ধুর একদার একান্ত সচিব মোহাম্মদ ফরাশউদ্দিন  সেদিন মন্তব্য করেছেন, হাজার টাকা খেলাপির জন্য জেলে যেতে হয় কিন্তু শতকোটি টাকা খেলাপির জন্য কিছু হয় না।  

হাঁ একটি বিষয়ে আমরা সম্ভবত এখন অনেকটাই স্বাভাবিক আছি। সন্ত্রাস বা নাশকতা যাই বলা হোক না কেন আমরা অনেকটাই ভালো আছি। তবে ঢিলেমি দেওয়া যাবে না।  মাঝেমধ্যেই আধুনিক উন্নত দেশের অবস্থা পর্যবেক্ষণ করে মনে হয়,  বৈশি^ক প্রেক্ষাপট বিবেচনায় আমরা ভালো। অবশ্য, এটা বলার সঙ্গে সঙ্গে কিছু লোকের গাত্রদাহ শুরু হয়ে যায়। এই সত্যিটা মানতেই চান না কিছু লোক। বিভিন্ন সময় আমরা দেখেছি, বাংলাদেশের গোয়েন্দারা অসংখ্য ঘটনা প্রকাশ্য সামনে আসার আগে অন্ধকারেই নিস্ক্রিয় করে দিতে সক্ষম। তাঁদের  যোগ্যতা আর দক্ষতা দিয়েই এটা তাঁরা করে থাকেন। অবশ্য শোনা যায়, এটা নাকি পছন্দ না একশ্রেণির রাজনীতিকের। কারণ, বড় কোনো ভয়ঙ্কর ঘটনা ঘটলে বক্তৃতা দিতে তাদের সুবিধা হয়। বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নির্দেশে জঙ্গী পরিস্থিত মোকাবিলায় আমাদের পুলিশ প্রশাসন খুবই দায়িত্বশীলতা দেখিয়েছে। 

আমরা সবাই জানি, জঙ্গীবাদ-সন্ত্রাসবাদ এটা বৈশি^ক সমস্যা। সারাবিশ^ জঙ্গী আর সন্ত্রাসবাদ নিয়ে চিন্তিত। যদিও জঙ্গী-সন্ত্রাসী দমনে আমাদের পুলিশের কৌশল অনেকের পছন্দ হয়নি। বানিয়ে বানিয়ে কিছু রাজনৈতিক নেতা দায়িত্বহীন উক্তি করেছেন, করছেন। গল্প বলে চলেছেন নানা সময়ে।  অবশ্য জনগণের কাছে এগুলো কখনও গ্রহণযোগ্য হয়নি, হয়ও না।  তবে হাঁ, ২০১৬ সালে আমরা বড় বিপদে পড়েছিলাম। হোলি আর্টিজানের হামলায় বিপদগ্রস্ত হয়ে ছিলাম। আমরা কাটিয়ে উঠেছি সেসব সমস্যা ও সংকট। জঙ্গী মূলোৎপাটন না হলেও অনেকাংশে নিয়ন্ত্রণে। তবে হাঁ, শ্রমিকদের কথা আমরা ভাবছি খুবই কম। স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে হলে আগে শ্রমিকের বিষয় মাথায় নিতে হবে সরকারকে। ন্যায্য দাবি আদায়ে শ্রমিকদের আন্দোলন করতে হচ্ছে, আন্দোলন করতে গিয়ে অনেকে  জেলজুলুমেরও শিকার হয়েছেন। কিছু ভুল নীতি ও দুর্নীতির কারণে অধিকাংশ রষ্ট্রায়ত্ত কারখানা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বিপুলসংখ্যক শ্রমিক  বেকার হয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একাগ্রতা ও নিষ্ঠার কারণে অর্থনৈতিক  ক্ষেত্রে  যে বাংলাদেশের ব্যাপক উন্নতি হয়েছে, তার  পেছনে শ্রমিকদের অবদান অনস্বীকার্য। শ্রমিকদের ঠকিয়ে  কোনো শিল্প এগোতে পারে না। দিনরাত পরিশ্রম করেও অনেকে পরিবার পরিজন নিয়ে ভালোভাবে  বেঁচে থাকার ন্যূনতম মজুরি পাচ্ছেন না।  তৈরি  পোশাকশিল্পসহ কয়েকটি খাতে শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরিকাঠামো থাকলেও একশ্রেণির মালিকসহ নানা কারণে তাদের প্রকৃত মজুরি কমে  গেছে। অনেক ক্ষেত্রে তারা মজুরিও  পাচ্ছেও না।

আমরা অনেকেই জানি, এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলের  দেশগুলোর মধ্যে ন্যূনতম মজুরি সবচেয়ে কম বাংলাদেশে। কম মজুরি দিয়ে এবং অনিরাপদ কর্মপরিবেশে উপযুক্ত কাজ আশা করা যায় না। ‘স্মার্ট হবে বাংলাদেশ’ গড়তে আমাদের কাজ করতে হবে।  স্মার্ট বাংলাদেশ করতে হলে শ্রমিকদের জীবনমানও স্মার্ট করা জরুরি। একথাটি মাথায় রাখাও জরুরি। এটাই সত্য শ্রমিক বাঁচলেই শিল্প বাঁচবে, আর শিল্প বাঁচলে  দেশ বাঁচবে। সুতরাং এখন আমরা ভালো আছি সেটা বলতে চাই কিন্তু কিছু কিছু দুর্নীতিবাজ, সাম্প্রদায়িক, জঙ্গীআদর্শিক লোকের কাছে শান্তি অপছন্দ। তারা জেল থেকে ছাড়া পেয়েই নতুন ষড়যন্ত্র করার পরিকল্পনা কওে থাকে। এক্ষেত্রে সতর্কতা জরুরি। বাঙলার জনগণ বুক চিতিয়ে চলুক এটা তাদের অপছন্দ।  প্রধানমন্ত্রী  শেখ হাসিনার নির্দেশনায় সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ দমনে সরকার জিরো টলারেন্স নীতি অনুসরণ করে আসছে। একইভাবে শুধু কথায় নয়, কাজেই  দুর্নীতি মোকাবিলায় জিরো টলারেন্স নীতিতে বাংলাদেশ এগিয়ে যাক। বাংলাদেশকে অস্থির ও অনিরাপদ করার জন্য একটি চক্রান্তকারী মহল ওঁৎপেতে আছে এটা মনে করতে হবে। ষড়যন্ত্রকারীদের মানুষ জানে ও চিনে। এ কারণে সংশয় সন্দেহ থাকা অমূলক নয়। এখন বিএনপির  ভারতবিরোধিতার রাজনীতি ও বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর বক্তব্যের সারাংশ হচ্ছে বাংলাদেশকে বিপদে ফেলা। দেশের বাজারব্যবস্থাকে অস্থির করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত।  বিএনপির রাজনীতি এখন হচ্ছে ‘গণবিরোধী রাজনীতি।’ সুতরাং পাঁচবারের নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে এখনই কঠোর হতে হবে। চক্রান্ত-ষড়যন্ত্রকারীরা বসে নেই। জনগণকে কষ্ট দেওয়ার রাজনীতিতে কারা কারা অভ্যস্ত তা এদেশের মানুষ জানে।  গোয়েন্দাদের আরো বেশি সতর্ক হওয়া চাই। সাবের হোসেন চৌধুরী, মুনতাসির মামুন, শাহরিয়ার কবিরের মতো ব্যক্তিদের রিমান্ডে নিয়ে নজিরবিহীন নির্যাতন চালানোর রেকর্ড বিএনপি-জামায়াত সরকারের আছে। লেখক : সিনিয়র সাংবাদিক, কলামিস্ট, কথাসাহিত্যিক ও ফিল্মমেকার