প্রকাশিত: Mon, May 6, 2024 1:24 PM
আপডেট: Mon, Jun 23, 2025 12:58 AM

কার্ল মার্ক্স যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি প্রাসঙ্গিক এখন

গাজী নাসিরউদ্দিন আহমেদ : মহামতি কার্ল মার্ক্সের জন্মদিন ৫ মে। এদিনে জন্মদিন প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদারেরও। ফেসবুক মেমোরি বলছে, দুজনকে নিয়ে আমি একাধিক পোস্ট লিখেছি। তাদের ব্যক্তিজীবন, সামাজিক জীবন ও রাজনৈতিক জীবন নিয়ে। লিগ্যাসি না থাকলে মৃত মানুষকে নিয়ে কথা হয় না। লিগ্যাসি যদি রিলিভ্যান্ট হয় তবে তাকে নিয়ে বেশি কথা বলতেই হয়। কৈশোর ও যৌবনের প্রথম বেলায় আমি মার্ক্সবাদী ছিলাম। পরে মার্ক্সবাদী থাকিনি, কিন্তু মার্ক্স আমার ভাবনারাজ্যে এমনভাবে আধিপত্য করেন তাকে ডিনাই করে চলা অসম্ভব। আমি ক্ষুদ্র মানুষ। বড় মনীষীদের অনেকেরই অবস্থা তেমন। মার্ক্স উত্তর বিশ্বে চিন্তা জগতে বড় বড় ঘটনা ঘটেছে। বিজ্ঞানের মৌলিক কিছু চিন্তা ছাড়া দর্শন, সমাজবিজ্ঞান ও রাজনীতির ক্ষেত্রে উইদ ওর উইদাউট মার্ক্স কোনো চিন্তা আগায়নি। উইদাউট মার্ক্স কথাটা একটু বলে নেই। 

পোস্ট মার্ক্সিস্ট দুনিয়ায় ফেনামেনলজি বলে একটি দর্শন চিন্তা প্রবল ছিল। হুসের্ল, হাইডেগার ছিলেন এর পুরোধা। উদাহরণ দিয়ে বলি। অস্তিত্ববাদী জাঁ পল সাঁত কফি শপে একজনের সঙ্গে দেখা করবেন। ভদ্রলোক এলেন না সাক্ষাতে। এবার সাঁত ওই সাক্ষাতের বর্ণনা লিখলেন। কফি উইদ উইদাউট হিম। লাইক দিস। তার শারীরিক অনুপস্থিতির সঙ্গে কফি। স্লাভয় জিজেকের বহু প্রচলিত কৌতুক আছে ইউটিউবে এনিয়ে। 

হয়তো অনেকেই তার সাথে পরিচিত। মার্ক্স উত্তর চিন্তা জগতে মার্ক্সের ভূত তাড়া করেছে প্রায় সকলকেই। এক্সিস্টেন্শিয়ালিজম, ফ্রাংকফুর্ট স্কুল, স্ট্রাকচারলিজম, পোস্ট স্ট্রাকচারলিজম, নিও মার্ক্সিজম, পোস্ট মার্ক্সিজম, পোস্ট মর্ডানিজম এই সব স্কুল অব থট নতুন সব চিন্তা হাজির করেছে বটে কিন্তু ইদার উইদ মার্ক্স ওর উইদাউট মার্ক্স। মার্ক্সের ক্রিটিক করে, মার্ক্সকে মডিফাই করার নামে ওর মার্ক্সকে ডিনাই করে। দুটি ঘটনা বলে শেষ করে দেব।  কুড়ি শতকের পঞ্চাশের দশকে ফ্রান্সে কালচারাল সমাজতন্ত্রীদের জোয়ার। আলথুসার, সাঁত, ফুকোরা বুদ্ধিজীবিতার মন্দির যেন। আমেরিকান সাম্রাজ্য প্রতাপশালী হয়ে উঠছে। ফরাসী বুদ্ধিবৃত্তিক আন্দোলনে গোয়েন্দাগিরি শুরু করল সিআইএ। মিশেল ফুকো বাতিলই করে দিয়েছিলেন মার্ক্সকে। উনিশ শতকের বৃত্তেবন্দী আখ্যা দিয়ে ফুকো এও বলেছিলেন, তার সময়ের ফাঁকগুলি, বাঁকগুলি মার্ক্স ধরতে পারেননি। সিআইএ তার রিপোর্টে মার্ক্সকে কবর দিয়ে দেবার কৃতিত্ব দিয়েছিল ফুকোকে। সম্প্রতি ফুকোর রচনার একটি অংশ দেখলাম। লেখালেখিতে মার্ক্সকে উদ্ধৃত করা প্রসঙ্গে ফুকো বলছেন, তিনি মার্ক্সকে কোট করার প্রয়োজনীয়তা দেখেন না। কেন দেখেন না? তিনি বলছেন, আপনারা যখন ফিজিক্স নিয়ে লেখেন তখন কি তার নিয়মগুলো উল্লেখ করতে এটা নিউটনের, এটা আইনস্টাইনের এমনটি বলেন!! কথিত এন্টি মার্ক্সিস্ট এইভাবে ফুকোডিয়ান মার্ক্সিস্ট! এবার আরেকটি ঘটনা বলি। 

৫০ বছর ধরে মার্ক্সের ক্যাপিটাল পড়ান প্রফেসর হার্ভি। তিনি বলছেন, সত্তুরের দশকে আমি যখন ক্যাপিটালের ফার্স্ট পার্ট পড়াতাম তখনও নিজের মধ্যে একটু খটকা লাগতো। কমিউনিজমের পাল্টা সোশ্যাল ওয়েলফেয়ার স্টেটের খুব হাওয়া ছিল তখন। মার্ক্স আসলেই যা বলছেন, তাই সত্যি কি ঘটবে? নব্বইয়ের দশকে এসে নিও লিবারালদের সর্বগ্রাসী সময়ে এসে হার্ভির মনে হল আরে তাইতো। 

মার্ক্সতো এখনই বেশি প্রাসঙ্গিক। আজকে ক্যাসিনো ক্যাপিটালিজম, সার্ভিস ইকোনমি, ডেট ইকোনমি আর ডিজিটাল মানির যুগে এসে তার মনে হচ্ছে, কার্ল মার্ক্স যে কোন সময়ের চেয়ে সবচেয়ে বেশি প্রাসঙ্গিক এখন। ওয়েলথ অব ন্যাশনস এ এডাম স্মিথ বলেছিলেন, বাজার মানে মার্কেট যত কম্পিটিটিভ হবে মানুষে মানুষে বৈষম্য তত কমবে। মার্ক্স বলেছেন উল্টোটা। বাজার যত কম্পিটিটিভ হবে, বৈষম্য তত বাড়বে। আমরা আজ কি দেখছি? লেখক: সাংবাদিক। ৫-৫-২৪। ফেসবুক থেকে