প্রকাশিত: Mon, May 6, 2024 1:26 PM
আপডেট: Mon, Jun 23, 2025 1:24 AM

অল্পস্বল্প জীবনপাঠ ভাষা ও প্যারাডাইম

মঈন চৌধুরী : আমাদের সত্তার সঙ্গে ভাষা যুক্ত থাকার কারনে, আমাদের জীবন ও জগৎ বিষয়ক ধ্যান ধারণাও ভিন্ন ভিন্ন মাত্রার রূপ ধারণ করে। তবে জীবন ও জগৎ নিয়ে কিছু কিছু ধারণা আমাদের একই মাত্রায় থাকে, যার ফলে সমাজে আমরা একই সঙ্গে চলতে পারি। মনস্তত্ত্ববিদ কার্ল গুস্তাভ ইয়ুং মানুষের যৌথ মনস্তত্তের কথা উল্লেখ করেছেন, যেখানে জগৎ ও জীবন সম্পর্কীয় কিছু স্বতঃসিদ্ধ ধারণা মানুষের মনে যৌথভাবে অবস্থান করে। এমন যৌথ মনস্তত্ত্ব না থাকলে আমরা সামাজিক মানুষ হিসেবে জীবন যাপন করতে পারতাম না। এখানে উল্লেখযোগ্য যে আমাদের যৌথ মনস্তত্ত্বই তৈরি করেছে আমাদের সার্বিক চেতনাকাঠামো বা প্যারাডাইম। আমাদের মূল সমস্যাই হলো আমাদের প্যারাডাইম বা চেতনাকাঠামো। প্রথমেই বিশ্লেষণ করা যাক আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থাকে। একই সমাজে আর একই দেশে থেকে আমরা শিক্ষা পাচ্ছি বাংলা মিডিয়াম স্কুল, ইংরেজি মিডিয়াম স্কুল, আলিয়া মাদ্রাসা আর কওমি মাদ্রাসা থেকে। সাধারণ শ্রমিক আর কৃষকরা জ্ঞান আহরণ করছে ওয়াজ মাহফিলের তথাকথিত হুজুরদের বানী আর ফতোয়া থেকে। এমন বিচিত্র আর বহুমুখী শিক্ষা ব্যবস্থা থাকলে জনগণের ভিন্ন মাত্রার চেতনাকাঠামো থাকাই স্বাভাবিক। 

একই যৌথ-মনস্ততত্ত্বে, একই প্যারাডাইমে আমাদের ইতিহাসে ছিলো জাতপাত, কুলীন-অচ্ছুত, ম্লেচ্ছ-মালাউন, শোষক-শোষিত ইত্যাদির মতো বিভাজন।  বর্তমানে আছে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষ-বিপক্ষ, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা-চেতনাহীনতা, প্রগতিশীল-প্রতিক্রিয়াশীল, প্রতিক্রিয়াশীল প্রগতিশীল-প্রগতিশীল প্রগতিশীল, ছুপা-প্রগতিশীল, রাজাকার-নব্য রাজাকার, প্রগতিশীল মৌলবাদী-প্রতিক্রিয়াশীল মৌলবাদী ইত্যাদির মতো বিভাজন। ভাষাভিত্তিক এই বিভাজনগুলোর প্রেক্ষাপটে আছে সত্য-অসত্য। প্রগতীকে রক্ষা করতে গিয়ে সৃষ্টি হয়েছে প্রতিক্রিয়াশীল মাস্তান বাহিনী, মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে বিক্রি করে চালু হয়েছে ঘুষ, লুটপাট আর অরাজনৈতিক কর্মকান্ড। সব ধরনের প্যারাডাইমিক ঘটনাকে জায়েজ করার জন্য চালু আছে ভাষাভিত্তিক পন্ডিতদের বক্তব্য, বিবৃতি, বক্তৃতা আর টকশো। ভাষাচক্রে মানুষ হচ্ছে বিভ্রান্ত, বিচলিত, অবদমিত, আর মানুষ নিস্তেজ হয়ে চুপ করে গ্রহণ করছে সব। আমাদের এগুতে হলে আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা আর চেতনাকাঠামোকে বদলাতে হবে। ৪-৫-২৪। ফেসবুক থেকে