
প্রকাশিত: Tue, May 7, 2024 1:53 PM আপডেট: Sun, Jun 22, 2025 8:56 PM
অভিনন্দন কবিগুরু!
প্রবীর বিকাশ সরকার : কবিগুরু এই নশ্বর পৃথিবীর মায়াত্যাগ করে চলে গেছেন সে আশি বছরের অধিক হয়ে গেলো। কিন্তু আজও তিনি শুধু বাঙালি সমাজেই নয়, পৃথিবীর বহু দেশে ও সমাজে রুচিশীল, সৃজনশীল আর শান্তিবাদী মানুষের মনে সদাজাগ্রত। সেই বহু দেশের মধ্যে জাপান অন্যতম। রুচিশীল সবুজস্নিগ্ধতার জন্য জাপান ছিল কবিগুরুর কাছে স্বর্গীয় আনন্দ এবং মানসিক স্বস্তির অমরাবতী। মহাপ্রয়াণের পূর্বেও তিনি তার প্রিয় দেশ জাপানে এসে শান্ত-সতেজ আর জলজ সবুজ-শ্যামলিমার মাঝে বসে কাব্যচর্চার ইচ্ছে ব্যক্ত করতেন তাঁর ঘনিষ্ঠজনদের কাছে। এমন তথ্য পেয়েছি কবিগুরুর অত্যন্ত প্রিয় স্নেহধন্য জাপানি ভক্ত মাদাম ড. কোওরা তোমির জীবনবৃত্তান্তে।
কবিগুরু যখনই অশান্তি অনুভব করেছেন শান্তির দেশ জাপানে চলে আসতে চাইতেন। পাঁচবার এইদেশে এসেছেন। এদেশটি তাঁর প্রাণে শান্তি এবং আরাম যুগিয়েছে নিঃস্বার্থভাবে। অথচ জীবদ্দশায় কম সমালোচনা করেননি জাপানের সমরনীতির, অতিরিক্ত পাশ্চাত্যনির্ভরতার। জাপান-চীন যুদ্ধের ভয়াবহতা তাঁকে সবচেয়ে বেশি ব্যথিত করেছিল। এজন্যই কি সভ্যতার সঙ্কটের কথা তাঁর অশান্ত মনে উদয় হয়েছিল? আমার ধারণা তো তাই। কারণ পৃথিবীর মারণসঙ্কট থেকে উদ্ধারের জন্য পূর্বদিক তথা দূরপ্রাচ্য থেকে কোনো মহামানবের আবির্ভাব প্রত্যাশা করেছেন তিনি সভ্যতার সঙ্কট প্রবন্ধে। হয়তো তাঁর এই প্রত্যাশা সূর্যোদয়ের দেশ জাপানই পূরণ করবে ভবিষ্যতে। কেননা তিনি জাপানের অমিতবল আধ্যাত্মিক শক্তির কথা জানতেন। আধ্যাত্মিক শক্তি ছাড়া মহামানবের জন্ম হয় না। কবিগুরুর মতো আমিও প্রবল আশাবাদী জাপানকে নিয়ে।
সুদীর্ঘ ৪০ বছরের অভিজ্ঞতায় আমার এমন বিশ্বাস জন্ম নিয়েছে যা বলতে দ্বিধা নেই মোটেই। প্রাচীনকাল থেকেই জাপান শান্তির অন্বেষণ করে এসেছে। একইসঙ্গে বহির্বিশ্বের শিক্ষা ও সংস্কৃতিকে গ্রহণ করে নিজের সংস্কৃতি ও দর্শনকে সমৃদ্ধ এবং বৈচিত্র্যময় করার প্রচেষ্টাও ছিল, এখনো আছে। তাই জাপান এত কালারফুল। রবীন্দ্রনাথকে এই বৈচিত্র?্যও প্রবলভাবে আকৃষ্ট করেছিল। জাপানিদের সৃজনশক্তি এবং প্রকৃতিকে নানন্দিকভাবে সাজিয়ে তোলার অদম্য স্পৃহা তাঁকে ঈর্ষণীয়ভাবে মাতাল করেছিল যা তিনি একাধিক রচনায় বলেছেনও।
আমার আপন জন্মভূমি বাংলাদেশ থেকে সাত হাজার মাইল দূরে অবস্থিত জাপানকে আজ দ্বিতীয় জন্মভূমি বলে মনে হওয়ার অন্যতম প্রধান কারণ রবীন্দ্রনাথের উজ্জ্বল স্মৃতির উপস্থিতি, ছড়াছড়ি। আমি এই দেশে একা নই--একাকীত্ব অনুভব করি না তেমনভাবে মূলত রবীন্দ্রনাথের কারণেই। যেখানেই যাই তিনি আড়ালে থেকে শক্তি যোগান। কত জায়গায় তাঁর স্মৃতি খুঁজে পেয়েছি। বহু জাপানি তাঁকে ভালোবাসেন তাঁর অমূল্য অমর প্রেরণাদায়ক লেখার জন্য। গ্রন্থে, দৈনিকে, ম্যাগাজিনে ঘুরেফিরে উদ্ভাসিত হন তিনি। ইন্টারনেটে অজস্র জাপানি ভক্তের মতামতে, অভিমতে এবং লেখালেখিতে রবীন্দ্রনাথ উল্লেখিত, জাগ্রত যা বিস্ময়কর। তাঁর জাতির, তাঁর জন্মভূমির একই বাঙালি আমি ভাবতেই প্রাণে এক অব্যক্ত উন্মাদনা জাগে, আনন্দে আপ্লুত হয় হৃদয়। এই আনন্দ আমার অসামান্য হয়েছে সম্প্রতি রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা ভারতের চতুর্থ সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কার পদ্মশ্রীতে (২০২৪) ভূষিত হয়েছেন দেখে। এর আগে ২০১৬ সালে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা স্বাধীনতা পুরস্কারে সম্মানিত হয়েছেন। ২০১৫ সালে তিনি জাপানে এসেছিলেন বেড়াতে। আমি আমার এক রবীন্দ্রভক্ত বান্ধবী ওওবা তামিকোর সহযোগিতায় কবিগুরুর অন্যতম প্রিয়স্থান য়োকোহামা বন্দরনগরীতে অবস্থিত শতবর্ষ পুরনো সানকেইএন বাগানবাড়িতে নিয়ে গিয়েছিলাম। সেখানে তাঁর দু-তিনটি রবীন্দ্রসংগীতের চিত্রায়ন করার ব্যবস্থা করেছিলাম। কী যে আনন্দিত হয়েছিলেন রবীন্দ্রস্মৃতিবিজড়িত বাগানবাড়িটি ঘুরে ঘুরে দেখে তিনি এখনো চোখে ভাসে। কবিগুরু প্রথম জাপানভ্রমণের সময় এই বাগানবাড়িতে প্রায় তিনমাস আতিথ্যগ্রহণ করেছিলেন ১৯১৬ সালে। এরপরও তিনি ১৯২৪ এবং ১৯২৯ সালে আরও দুবার এখানে এসেছিলেন। ছবিটি ১৯২৪ সালে বাগানবাড়িতে গৃহীত। পা ছড়িয়ে বসা কবিগুরুর এই নির্ভার, আরামদায়ক ভঙ্গি খুবই বিরল। চিন ভ্রমণের সময় তিনি জাপানে আসার জন্য তাঁর ভক্ত মাদাম কোওরা তোমিকে বার্তা পাঠান। সেই বার্তা পেয়ে শ্রীমতী কোওরা গুরুদেবকে জাপানে আগমনের ব্যবস্থা করেন। কবিগুরু দুবার চিন ভ্রমণ করেছিলেন কিন্তু সুখকর ছিল না সেই ভ্রমণ জোরালোভাবেই প্রতিভাত হয়। জাপান প্রবাসী লেখক ও গবেষক
আরও সংবাদ
চ্যাম্পিয়ন ভারত : একটা ছোট মুহূর্ত কতো বড় পার্থক্য গড়ে দিতে পারে
‘ওই ক্যাচ হয়নি, সুরিয়াকুমারকে আবার ক্যাচ ধরতে হবে’!
কতো দেশ, কতোবার কাপ জিতলো, আমাদের ঘরে আর কাপ এলো না!
সংগীতাচার্য বড়ে গোলাম আলি খান, পশ্চিমবঙ্গের গর্ব সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় ও আমি
ইন্ডিয়ান বুদ্ধিজীবী, ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্র ও দেশের বুদ্ধিজীবী-অ্যাক্টিভিস্ট
মতিউর প্রতিদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ৮৩ ব্যাচের বন্ধুদের গ্রুপে সৎ জীবন যাপনের উপদেশ দিতেন!

চ্যাম্পিয়ন ভারত : একটা ছোট মুহূর্ত কতো বড় পার্থক্য গড়ে দিতে পারে

‘ওই ক্যাচ হয়নি, সুরিয়াকুমারকে আবার ক্যাচ ধরতে হবে’!

কতো দেশ, কতোবার কাপ জিতলো, আমাদের ঘরে আর কাপ এলো না!

সংগীতাচার্য বড়ে গোলাম আলি খান, পশ্চিমবঙ্গের গর্ব সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় ও আমি

ইন্ডিয়ান বুদ্ধিজীবী, ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্র ও দেশের বুদ্ধিজীবী-অ্যাক্টিভিস্ট
