প্রকাশিত: Thu, May 9, 2024 1:48 PM
আপডেট: Sun, Jun 22, 2025 6:14 PM

অধিকাংশ দরিদ্র মানুষ খাবার সময় কথা বলে না

অপরাহ্ণ সুসমিতো : [১] কাল বিকেলে নারী নেত্রী সেমিনার থেকে তার সুসজ্জিত বাড়িতে ফিরেই কাজের মেয়েটার গায়ে তীব্র গরম পানি ঢেলে দেয়। তার রাজনৈতিক সোয়ামী ফেসবুকে কমরেড মণি সিংহ বাম ধারা ও সাম্প্রতিক ব্যর্থতা এরকম একটা পোস্টিং দিতে দিতে এক ফাঁকে অনলাইনে প্রাপ্ত বয়স্কদের জন্য ওয়েবে সামান্য ঢুঁ মেরে আসেন। মুহূর্তে এই বুদ্ধিজীবী তার উত্থান রহিত শরীরে, চোখে পৃথিবীর সমস্ত নারীকে হাতের মুঠোতে টেনে আনে। আহা কী অক্ষমতার পাশে সমান্তরাল সক্ষমতা। [২] কেউ কেউ ছাত্রজীবনে ভালো কবিতা লিখতেন। মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ নিপাত যাক বলে শ্লোগানে শ্লোগানে ক্যাম্পাস মুখর করতেন। রাতের বেলায় লুকিয়ে বিসিএস গাইড পড়তেন আর ডিভি লটারির মুসাবিদা। যেটা কাজে লাগে। এক সময়ের ব্রিফকেস ব্যবসায়ী তার জেলা থেকে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি। মাননীয় উপমন্ত্রী। ব্যর্থ কবি ভুল করে এখনও মেয়েদের ইন-বক্সে ইনিয়ে বিনিয়ে কাব্য সুষমা বিলিয়ে দেন। 

[৩] গার্মেন্টস থেকে চাকরী চলে গিয়েছিল মেয়েটির। চাকরি যাবার পরদিনই মেয়েটার ভাতার তাকে গুনেগুনে ১২টা লাথি দিয়ে ঘর থেকে বের করে দেয়। মেয়েটার ফেসবুকে অ্যাকাউন্ট আছে। যাই-ই লেখে, প্রতিদিন ১২০৯টা লাইক পড়ে। প্রতিদিন সন্ধ্যায় এত লাইক দেখে পুলক লাগে। হাওয়ার কল ছেড়ে দিয়ে আজ লেখে স্ট্যাটাসে আজ আমার মুক্তির দিন,কাল আমার মৃত দেহে গজাবে চন্দন বন। কম্পিউটার বন্ধ করে মেয়েটা আত্মহত্যার জন্য প্রস্তুত হতে হতে হেসে ওঠে। অনুমান করে নেয় আজ ১৩০৭ লাইক। ১০০৯ মন্তব্য। বিপ্লব নেমে এলো বুঝি তার দেয়ালে। [৪] আমাদের পাড়ায় সুকন্যা নামে একটা মিষ্টি মেয়ে ছিল। ওর জন্মদিনে পাড়ার মসজিদের হুজুর ওকে ফেয়ার এ্যান্ড লাভলি দিলো। থানার সাব-ইন্সপেক্টর দিল কিছু লুকায়িত অন্তর্বাস। সাব-ইন্সপেক্টর রাতে তার স্ত্রীর সাথে ব্যর্থ সঙ্গমে সুকন্যাকে ভেবে নিলো। আহা থানার পাশের গাছে ফুটল হাসনাহেনা। আহা আজ রাই কিশোরী সুকন্যা নেচে যাবে গোয়ালন্দ ঘাট থেকে দূরের স্টিমারে। [৫] কোনো কোনো শিক্ষক ক্লাসে কোয়ান্টাম তত্ত্ব পড়াতে যাবার সময় কালো বিড়াল দেখে আতকে ওঠে। যাত্রা অশুভ। [৬] ক্রিকেট খেলাটায় পারফরমেন্স খুব অনিশ্চিত বলে খেলোয়াড়রা খুব তাবিজ-কবজ, মাদুলি পরে। এক সময় সামান্য আগুনে পুরো বন পুড়ে ছাই হয়ে যেত বলে অগ্নিপূজা করত। আজ নিউট্রন বোমাতে পুরো সভ্যতা ধ্বংস হবার আশংকা থাকলেও কেউ বোমা পূজা করে না। [৭] সম্প্রদানের সাথে সম্প্রদানকারী ব্যক্তির মানসিক সম্পর্ক না থাকলেও চলে। কেউ কেউ ব্যাংক থেকে লোন নিয়ে সে অর্থ ত্রাণ তহবিলে সম্প্রদান করে। ইক্যুলিব্রিয়াম বলে কথা। কোরবানির পশুর সাথে কোরবানিদাতার সম্পর্ক খুব ফর্মাল। [৮] চল্লিশোর্ধ কোনো পুরুষের পকেটে চিরুনি দেখলে মোটামুটি ধরে নিতে পারো এক সময়ে সুপুরুষ ছিলেন। এখন রাজ্যপাট সব হারিয়ে সম্রাট বাহাদুর শাহ। দয়া করে প্রকাশ্যে লোকটার চিরুনির রঙ সুন্দর এটা বলো না। তাকে আবার এভার গ্রিনও বলো না। এভার গ্রিন মানেই হলো আপনি বুড়ো।  [৯] ভাইয়ের সংসার ভাঙ্গলে বোন উদ্বিগ্ন হয় ভাইয়ের সন্তান সন্ততি নিয়ে আর বোনের সংসার ভাঙ্গলে ভাই উদ্বিগ্ন হয় বোঝা ঘাড়ে এসে পড়ল বলে। [১০] কেউ ধর্ম পালন করুক না করুক, সৃষ্টিকর্তার কিচ্ছু আসে যায় না, আসে যায় মানুষের। [১১] অধিকাংশ দরিদ্র মানুষ খাবার সময় কথা বলে না। [১২] ভালো শিক্ষকদের ক্লাস চলাকালীন তাঁকে যে কোন প্রশ্ন করো, বিরক্ত হবে না। মুখস্থবিদ্যার শিক্ষকদের প্রশ্ন করা বিপদজনক। [১৩] বাথরুমে সবাই গান করে নিজের জন্য, টেলিভিশনে গান করে অন্যের জন্য। প্রথমটা প্রাকৃতিক বলে পোশাক থাকে না, দ্বিতীয়টা অপ্রাকৃতিক বলে পোশাক থাকে। [১৪] কোনো মৃত বাড়িতে তুমি যদি তৃতীয়দিন যাও দেখবে তোমার সামান্য কৌতুকেও ও বাড়ির লোক হেসে উঠবে।