প্রকাশিত: Thu, May 9, 2024 1:49 PM
আপডেট: Sun, Jun 22, 2025 7:11 PM

পুতিন আফ্রিকায় ফ্রান্সকে হারিকেন ধরানোর প্রতিশোধ ম্যাঁখোর ১০০ সৈন্য!

মঞ্জুরে খোদা টরিক : নিজের লেজ কাটা গেছে এখন অন্যদের কিভাবে কাটা যায় সেই চেষ্টায় ব্যর্থ হয়ে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল ম্যাখোঁ ইউক্রেনে  ১০০ সেনা পাঠিয়েছেন। এই ১০০ সেনা পাঠাতে তিনি কয়েক মাস ধরেই হুঙ্কার ছাড়ছিলেন। ন্যাটোর বৈঠকেও ব্যাপক তোড়জোর করেছেন, কিন্তু কাজ হয়নি। ন্যাটোর কোন বন্ধুই রাজি হয়নি নিজেদের লেজ কাটতে। সব চেষ্টায় ব্যর্থ হয়ে মুখ রক্ষায় নিজেই সৈন্য পাঠিয়েছেন ম্যাঁকো। যেন নিধিরাম সর্দার। এই যে ফ্রান্স ১০০ সৈন্য পাঠালো এরা কিন্তু কেউ ফ্রান্সের নাগরিক নয়। বিভিন্ন দেশ থেকে ভাগ্যান্বষেণে আসা অথবা টোপ দিয়ে নিয়ে আসা উলুখাগড়াদের নিয়ে গঠিত বাহিনীকে ইউক্রেনে পাঠিয়েছি। তাও কোথায় পাঠিয়েছে জানেন? ইউক্রেনের সবচেয়ে বিপদজনক যুদ্ধক্ষেত্র দনবাসে এলাকায়। যে অঞ্চল ইতোমধ্যে রাশিয়া দখল করে তাদের নির্বাচিত সরকার প্রতিষ্ঠা করেছে। যেখানে ইউক্রেনের কিছু সৈন্য মাঝে ঠুসঠাস আওয়াজ করে জানান দেয় যে, তাঁরা এখনো যুদ্ধ করছে এবং রাশিয়ার দখলদারিত্ব তারা মানেন না। কেন তাঁর ন্যাটো মিত্ররা সৈন্য পাঠালেন না?

কারণ তাদের এক কান ইতোমধ্যে কাটা গেছে, তারা দুই কান কাটতে চায় না। কিভাবে? ফ্রান্সের সাম্রাজ্যের সর্বশেষ কিছু প্রদীপ/কলোনী আফ্রিকার গরীব দেশগুলোতে ছিল। গত কয়েক বছরে এক এক করে সে সব ভাঙ্গচুড় হয়ে গেছে। ফ্রান্সের তাবেদার শাসকদের উৎখাত করে সে দেশের বিপ্লবীরা ক্ষমতা দখল করে তাদের বাড়া ভাতে ছাই দিয়েছে।  শুধু কি তাই? আফ্রিকার খনিশিল্প থেকে যে লুটপাট করে যে আয় হতো তাও বন্ধ হয়ে যায়। সবচেয়ে বড় গলা ধাক্কাটি আসে নাইজার থেকে। সেখান থেকে  ফ্রান্সে ইউরেনিয়ামের সব চেয়ে বড় চালান আসত। ফ্রান্স পারমাণবিক শক্তি থেকে তাদের ৭০ শতাংশ বিদ্যুৎ উৎপাদন করে। আর সেটা হয়েছে এমন সময় যখন বিশ্বে ইউরেনিয়াম সরবরাহে ব্যাপক সংকট দেখা দিচ্ছে এবং এর দামও ক্রমশ বাড়ছে। কারণ রাশিয়া, কাজাখস্তানের পর নাইজার হচ্ছে ইউরেনিয়ামের সবচেয়ে বড় উৎস। আর রাশিয়ার উপর অবরোধ দিয়ে নিজেদের পায়ে কুড়াল চালাচ্ছে ইউরোপের মূর্খরা। এই পরিস্থিতিতে ফ্রান্স অর্থনৈতিকভাবে হুমকি ও নাজুক পরিস্থিতির সম্মুখীন।

ফ্রান্সের বিদেশিদের নিয়ে গঠিত সেনা ইউনিটকে বলা হয় ফরেন লিজিয়ন। এই বিদেশি এই সেনারা ৩ বছর মেয়াদে চুক্তিবদ্ধ হয়ে থাকেন। ৩ বছর যুদ্ধের পর তাঁরা ফ্রান্সের নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করতে পারেন। আর যদি যুদ্ধ করতে গিয়ে মারা যান তাহলে তো সব শেষ। আর আহত হয়ে বেঁচে থাকলে তাঁরা ফ্রান্সের নাগরিকত্ব পাবেন। তখন তাঁদের ৩ বছর অপেক্ষা করতে হয় না। তাহলে এরা কি জীবন দিতে না জান বাঁচাতে যুদ্ধ করবে, আপনারাই বলেন? মাস খানেক আগে ম্যাঁখো বলেছিলেন, ইউক্রেন শীঘ্রই পরাজিত হবে। তাহলে তিনি আবার সেখানে সৈন্য পাঠাতে গেলেন কেন? কারণ আফ্রিকায় রাশিয়ার গলাধাক্কার শোধ নিতে রাশিয়ার ভারাটে ভাগনার বাহিনী সেখানে দখলদার ফ্রান্সের বাহিনীর বিরুদ্ধে মূর্তিমান আতঙ্ক হয়ে অবস্থান করছে। তাদের শায়েস্তা করছে। সম্প্রতি আফ্রিকার সাহেল অঞ্চল থেকে  ফ্রান্সের সৈন্যদে লেজ গুটিয়ে চলে আসতে হয়েছে। সেই স্থান দখল করেছে রুশ সেনারা।

আফ্রিকার যে দেশগুলোর ওপর ফ্রান্সের নিয়ন্ত্রণ ছিল তা বিপ্লব-বিদ্রোহে হাত ছাড়া হওয়ার পিছনে পুতিনের রিমোট কনট্রোল কাজ করেছে। আফ্রিকার বসন্তে ফ্রান্সে চির চৈত্রের দশা তৈরী হয়েছে। তাহলে কেনা ক্ষেপবে না বলেন?  ম্যাঁখোর দুঃখ কি আর ন্যাটো বুঝবে না? তাদের তো এক কান কাটা গেছে, লেজটাও কি কাটবে? এই অপমানের আঁচ সরাসরি এলিসি প্রাসাদে (ফ্রান্সের প্রেসিডেন্টের সরকারি বাসভবন) এসে লেগেছে। এতে ফ্রান্সের সরকার তো বটেই খনিশিল্প ও ফ্রান্সের অন্যান্য ব্যবসায়ও লালবাতি জ্বলে উঠছে।  ফ্রান্স ইউক্রেনে প্রথম ধাপে হযবরল ১০০ সেনা পাঠিয়ে ধাপে ধাপে ১ হাজার ৫০০ সেনা পাঠানোর পরিকল্পনা করেছেন। কিন্তু সেটা করতেও তাদের ২০২৭ সাল লাগবে।

ততোদিন ইউক্রেন কি যুদ্ধ চলবে? ন্যাটো কি জ্বালানি জোগাতে পারবে? আর রাশিয়া কি এত সময় নেবে? মজার বিষয় হচ্ছে সরকারের নানা ছোটখাটো বিষয়েও বিরোধী ব্যাপক তোলপাড় করে কিন্তু ম্যাঁখোর সৈন্য পাঠানো নিয়ে বিরোধী কোন টুশব্দও করেনি। কারণ কি? কারণ এই ১০০ দুধভাত সৈন্য নিয়ে তাদের কোন মাথা ব্যাথা নেই। কারণ এরা তো তাঁদের নিজেদের সন্তান নয়। আফ্রিকাসহ বিভিন্ন দেশ থেকে নিয়ে আসা, কিন্তু ফ্রান্সের শ্বেতাঙ্গদের সন্তান হলে এতক্ষন খবর ছিল। ম্যাঁখোও তিনবার চিন্তা করতো।   লেখক, গবেষক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক