প্রকাশিত: Sat, May 11, 2024 1:53 PM
আপডেট: Sun, Jun 22, 2025 5:02 PM

স্মৃতিগুলো যখন জমতে থাকে

শামীম আহমেদ :  ইউটিউবে ঘুরতে ঘুরতে হঠাৎ ১৯৯৭ সালের আইসিসি ট্রফির ফাইনালের ভিডিও চোখে পড়ল। মোহাম্মদ রফিক আর খালেদ মাহমুদ সুজনের ঝড়ো আর আকরাম খান, নান্নু, বুলবুলের দায়িত্বশীল ব্যাটিং সাথে মোহাম্মদ রফিক, সুজন আর সাইফুল ইসলামের বোলিং। বাংলাদেশের ঐতিহাসিক বিজয়। মনে পড়ে গেল স্টিফ টিকোলোর কথা। কী অসাধারণ একটা ১৪৭ রানের ইনিংস খেলেও দলকে জেতাতে পারলেন না ভদ্রলোক। 

নটরডেম কলেজে পড়ি তখন। মতিঝিলে ক্যাম্পাসে, কলেজের সামনের রাস্তায় রঙের বন্যা, কী ভীষণ উত্তেজনাকর মুহূর্ত। মনে হয় এই তো সেদিন, অথচ ২৭ বছর আগেকার কথা। ঝিরঝিরে ভিডিওতে আকরাম আর সুজনের চকচকে, অপেক্ষাকৃত ফিটফাট শরীর দেখে মনে হয় ওই যে সময়, সন্ধ্যাবেলা হেঁটে হেঁটে অন্ধকারে মিশে যাচ্ছে। কয়েক মিনিট ওই ভিডিও দেখার পর কোত্থেকে যেন উদয় হলো হুমায়ূন আহমেদের নাটকের একটা ভিডিও। আবুল হায়াৎ দুলাভাই, আলী যাকের শ্যালক। নাস্তার টেবিলে বোনকে আলী যাকের বলছেন, দুলাভাই আবুল হায়াতের বুদ্ধিবৃত্তি ১০০ তে ২০ থেকে ২৫ এর মধ্যে ওঠানামা করে। বোন বিরক্ত হয়ে তার নিজের বুদ্ধির পরিমাপ জানতে চাইলে আলী যাকের তৃপ্তির সাথে বললেন, ১০০ তে ৯৫। আবুল হায়াৎ সারাক্ষণ দেশ নিয়ে চিন্তা করছেন। আফজাল হোসেন লুতফুন্নাহার লতাকে দেখার জন্য বার বার নানা অজুহাতে ওই বাড়িতে আসেন। রহিমার মাকে হবু শাশুড়ি মনে করে পায়ে হাত দিয়ে সালামও করে ফেলেন।

 দেশের মাছের সমস্যা সমাধানে আলী যাকের একটা ডকুমেন্টারি বানানোর সিদ্ধান্ত নিলেন। নাম: হে মাছ। হুমায়ূন আহমেদ পারতেনও বটে। মধ্যবিত্তের খাবার টেবিলে আবুল হায়াৎ, লতা সবাই বিরক্ত প্রতিদিন একই মাছ খেতে হয় বলে আর সেই মাছের নামটা আবার ইলিশ। চমকে উঠি। নাটকের গিন্নী বলেন, বাজারে যা পাওয়া যাবে তাই তো খেতে দেবেন। অর্থাৎ সেই সময় বাজারে সহজলভ্য মাছ ছিল ইলি, ইলিশ খেতে খেতে ত্যক্ত বাঙালি অন্য মাছের সহজলভ্যতা নিশ্চিত করবে, তাই আবুল হায়াৎ সিদ্ধান্ত নিলেন বাঙালিকে বোঝাতে হবে একবছর মাছ খাওয়া যাবে না, আর আলী যাকের তার প্রচার করতে বানাবেন শর্ট ফিল্ম, নাম: হে মাছ! 

কতদিন আগেকার নাটক বহুব্রীহি? বোধহয় ১৯৮৮ সালের ৩৬ বছর আগের নাটক। ছত্রিশ বছর! সোফায় শরীরটা ডুবিয়ে দিয়ে  আড়চোখে দেখছিলাম পৃথিবীর এই প্রান্তে আরেকটি দিনের সমাপ্তি। সন্ধ্যা ৮টা বাজে, বাইরে তখনও সূর্যের ঢলে যাবার দৃশ্য। ভীষণ আরাম একটা আবহাওয়া। শরীরে ঠাণ্ডা বাতাস স্পর্শ করছে বারংবার। গোলাপ ফুলগুলো পুরো যৌবন নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। বাতাসে মেঘের গন্ধ। বৃষ্টিতে ঘাসফুল ফুটেছে, ঠিক যেখানে কদিন আগে জমে থাকা বরফেরা খুনসুটি করছিল। ভাবছিলাম সময়ের কথা। দেখছিলাম সময়কে। সময়ের শরীরটা উত্তাল সমুদ্রে বিলীন হয়ে যাওয়া একের পর এক ঢেউয়ের পরস্পরের গায়ে এলিয়ে দেয়া একেকটা খণ্ড নাটিকা যেন জীবন একগুচ্ছ স্মৃতির সন্নিবেশ। শুক্রবার সকালবেলা ব্যাগের বোঝা টেনে চলা মিন্তি বালকদের কারও মুখের কোণে থাকে হাসি, কারওবা দুঃখ। ঝুড়ি ওঠানোর কিংবা নামানোর সময় তারা আড়চোখে দেখে নেয় ব্যাগে কী আছে  জীবনটাও অমন। ঝড়ো বাতাসে সন্ধ্যাবেলা কফির মাগ হাতে নিয়ে জমে যাওয়া ঝোলাগুলো নেড়ে চেড়ে স্মৃতিগুলো দেখতে হয় মাঝে মধ্যে। স্মৃতিগুলো যখন জমতে থাকে, তখন অবশ্য ওসব মনে থাকে না। তাই ভাবছিলাম, সধশব সবসড়ৎরবং মুঁং, ঃযধঃ'ং ধষষ ুড়ঁ ধৎব মড়রহম ঃড় মবঃ ভৎড়স ঃযরং ড়হব ঃরসব হড়হ ৎবঁংঁধনষব নধম. লেখক ও গবেষক