
প্রকাশিত: Wed, Dec 28, 2022 3:52 PM আপডেট: Mon, Jun 30, 2025 2:10 AM
মেট্রোরেলের প্রথম চালক আফিজা এবং আমাদের হীনমন্যতা
গুলজার হোসেন উজ্জ্বল
মেট্রো রেলের চালক কেন এপ্লাইড কেমিস্ট্রি ও কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে মাস্টার্সÑ এই নিয়ে দেশ ও জাতির মাথা ব্যথার শেষ নেই। এ দেশে সাবজেক্ট বলুন বা চাকরি, কোনোটাকেই বাই চয়েজ নেওয়ার সুযোগ কম। সাবজেক্টই ছাত্র-ছাত্রীকে চয়েজ করে। অথবা সমাজের চাপে বাধ্য হয়। চাকরির ক্ষেত্রে তো এটা আরও বেশি নির্মম সত্য। চাকরির ক্ষেত্র সীমিত। বেশির ভাগই সাবজেক্ট অনুযায়ী চাকরি পায় না। অনেকেই নিজের ইচ্ছায় চয়েজ করে। এর পেছনে রয়েছে নানা রকম কারণ। এই পরিস্থিতিতে একজন নারী নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ফলিত রসায়নে স্নাতোকোত্তর পাস করে কেন মেট্রো রেলের চালক হয়েছেন, তা নিয়ে এক নির্মম তীর্যক সমালোচনার ঝড় উঠেছে ফেসবুকজুড়ে। অবশ্য অনেকে অভিনন্দনও জানাচ্ছেন।
আপনারা যারা সমালোচনা করছেন তাদের লেখা পড়ে মনে হচ্ছেÑ এমনটা এই প্রথম দেখলেন। এ দেশে ইসলামের ইতিহাসে পড়ে মহাকাশ গবেষণা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক হওয়া যায়। ইংরেজিতে পড়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রলায়ের সচিব হওয়া যায়। বুয়েট থেকে পড়ে ব্যাংকে চাকরি করছেন, দর্শন থেকে স্নাতোকোত্তর পাস করে রিয়েল এস্টেটে চাকরি করছেন। ডাক্তারি পাস করে পুলিশে জব করছেন। অনেক ডাক্তার তো পেইজ খুলে মাছ, সবজি, জামা কাপড়ের ব্যবসাও করছেন। করছেন না? এ দেশ থেকে যখন মানুষ উন্নত দেশে যায় তখন তারা কী করেন? ডাক্তার কোটায় ইমিগ্রেশন নিয়ে বেশির ভাগই সিকিউরিটি গার্ড বা সেলসম্যানের চাকরি করেন। করেন না? মানুষ নানা রকম জীবন যাপন করে। কখনো ইচ্ছে করে, কখনো বাধ্য হয়ে। যদি মনে করেন সিস্টেমের গলদ আছে, তাহলে সিস্টেম পাল্টাতে কাজ করুন। সে অনুযায়ী কথা বলুন। ব্যক্তির উদাহরণ টেনে যখন কথা বলেন, মানুষটিকে বিব্রত করা হয় না?
তিনি তো সেটা ডিজার্ভ করেন না। যিনি মেট্রো রেলের চালকের চাকরিটি নিয়েছেন আমি ধরে নিচ্ছি তিনি খুব প্রয়োজন বলেই চাকরিটি নিয়েছেন। একজন নারী হয়ে তিনি উলটো স্রোতে হাল ধরেছেন। চাকরিটি পেয়ে হয়তো তাঁর পরিবার বেঁচে গেছে। হয়তো তিনি নিজেও আত্মবিশ্বাস ফিরে পেয়েছেন। অনেক সমস্যার জট খুলেছেন একটা চাকরি দিয়ে। এমন অনেক গল্পই থাকতে পারে পর্দার পেছনে। এই মানুষটিকে অভিনন্দন না জানাতে পারেন, শক্তি দিতে না পারেন তার লেখাপড়ার দিকে আঙ্গুল তুলে তাকে ব্যর্থ প্রমাণ করার চেষ্টা করবেন না প্লিজ। অথবা এমনও হতে পারে তিনি খুব আগ্রহ নিয়েই এমন একটি পেশায় নিজেকে নিয়োজিত করেছেন। হতেই পারে। যেকোনো মানুষের যেকোনো পর্যায়ে পেশা বা পেশার বিষয় পরিবর্তনের অধিকার রাখেন। অধিকার থাকা উচিত। মানুষ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে নিজেকে সমৃদ্ধ করতে।
নিজের ভেতর একটা বিশ্বকে ধারণ করার মানসে সে পড়ালেখা করে। একটা চাকরি তার লাগে। কিন্তু লেখাপড়ার সমান চাকরি না পেলে তার পড়ালেখাই বৃথা কিংবা জীবন বৃথা, এমন মানসিকতা কোনো বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষিত মানুষের কি হওয়া উচিত? আমরা কেন ফেসবুকে এসে পাশের বাড়ির মুরুব্বিদের মতো আচরণ করি? বাদ দিন। আসুন এই শক্তিশালী নারীকে আমরা অভিনন্দন জানাই। একটা নতুন যুগে আমরা প্রবেশ করছি তার হাত ধরে। তিনি আমাদের ইতিহাসের অংশ হয়েছেন। তাঁকে স্যালুট। লেখক: চিকিৎসক
আরও সংবাদ
চ্যাম্পিয়ন ভারত : একটা ছোট মুহূর্ত কতো বড় পার্থক্য গড়ে দিতে পারে
‘ওই ক্যাচ হয়নি, সুরিয়াকুমারকে আবার ক্যাচ ধরতে হবে’!
কতো দেশ, কতোবার কাপ জিতলো, আমাদের ঘরে আর কাপ এলো না!
সংগীতাচার্য বড়ে গোলাম আলি খান, পশ্চিমবঙ্গের গর্ব সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় ও আমি
ইন্ডিয়ান বুদ্ধিজীবী, ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্র ও দেশের বুদ্ধিজীবী-অ্যাক্টিভিস্ট
মতিউর প্রতিদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ৮৩ ব্যাচের বন্ধুদের গ্রুপে সৎ জীবন যাপনের উপদেশ দিতেন!

চ্যাম্পিয়ন ভারত : একটা ছোট মুহূর্ত কতো বড় পার্থক্য গড়ে দিতে পারে

‘ওই ক্যাচ হয়নি, সুরিয়াকুমারকে আবার ক্যাচ ধরতে হবে’!

কতো দেশ, কতোবার কাপ জিতলো, আমাদের ঘরে আর কাপ এলো না!

সংগীতাচার্য বড়ে গোলাম আলি খান, পশ্চিমবঙ্গের গর্ব সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় ও আমি

ইন্ডিয়ান বুদ্ধিজীবী, ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্র ও দেশের বুদ্ধিজীবী-অ্যাক্টিভিস্ট
