প্রকাশিত: Sun, May 12, 2024 1:53 PM
আপডেট: Sun, Jun 22, 2025 2:56 PM

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসকে শুধু মাস্টার্স পড়ানোর জন্য তৈরি করা যেতে পারে

ড. কামরুল হাসান মামুন

আমার কন্যা ডেভিডসন কলেজে ফিজিক্সে মেজর করছে। আমেরিকাতে কয়েক হাজার লিবারেল আর্টস কলেজ আছে যার প্রায় সবগুলোতেই কেবল আন্ডারগ্রাজুয়েট পড়ানো হয় এবং প্রায় সবগুলোই প্রাইভেট কলেজ। এইগুলোতে মাস্টার্স বা পিএইচডি করানো হয় না। এই কলেজগুলোকে বলা হয় পিএইচডি ফিডার। এই কলেজগুলোর আরেকটি বৈশিষ্ট হলো এদের ছাত্র সংখ্যা খুব কম যাতে ছাত্র-শিক্ষক কন্টাক্ট নিবিড় হয়। ছাত্র সংখ্যা কম বলে এইসব কলেজের টিউশন ফি অনেক। তবে ছাত্র ভালো হলে খুব ভালো এমনকি ফুল রাইড স্কলারশিপ দেওয়া হয়। ফুলরাইড স্কলারশিপ পেতে হলে কেবল মেধাবী হলে হবে না একই সাথে আর্থিক অবস্থাটাও ওরা দেখে। দরখাস্ত করার সময় অবশ্যই ট্যাক্স রিটার্ন জমা দিতে হয়। এই ট্যাক্স রিটার্ন, রেজাল্ট, এক্সট্রা কারিকুলাম, নিজের জীবনঘনিষ্ট লেখাপড়ার প্রেরণা নিয়ে একটি রচনা ইত্যাদি অনেক কিছু লাগে। কন্যা আমার ফিজিক্সে পড়লেও তাকে সোশ্যাল সাইন্স, কম্পিউটার সায়েন্স ইত্যাদিসহ আরো অনেক এক্সট্রাকারিকুলার এক্টিভিটিস করতে হয়। প্রতিটি ইন্টারন্যাশনাল ছাত্রকে একটি লোকাল গার্ডিয়ান এসাইন করে দেওয়া হয়। এরাই এয়ারপোর্ট থেকে কলেজে নিয়ে যায় বা দিয়ে আসে। মাঝে মাঝে দাওয়াত করে বাসায় নিয়ে যায়, ঘুরতে নিয়ে যায় এবং দেখাশোনা করে। 

লিবারেল আর্টস কলেজগুলোরও একটা রেঙ্কিং করা হয়। সেই রেঙ্কিং-এ উইলিয়ামস কলেজ সবার সেরা। এই কলেজে ভর্তির সুযোগ ততটাই কঠিন যতটা কঠিন এমআইটি হার্ভার্ডে ভর্তি হওয়া। আমার কন্যার কলেজ সেই রেঙ্কিং-এ ১৬ নম্বরে। এই ছোট্ট কলেজের ছাত্র সংখ্যা ১ হাজার ৯০০ ছাত্রের মতো এবং এদের এন্ডোমেন্ট বা রিজার্ভ মানি হলো ১.৩২ বিলিয়ন। উইলিয়ামস কলেজের ছাত্র সংখ্যা হলো প্রায় ২০০০ এবং এদের এন্ডোমেন্ট হলো ৩.৪৮ বিলিয়ন ডলার। হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটির ছাত্র সংখ্যা প্রায় ২২ হাজার এবং এদের এন্ডোমেন্ট মানি হলো ৪৪ বিলিয়ন ডলারের বেশি যা বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ এর প্রায় ৩ গুণ। এমআইটির ছাত্র সংখ্যা প্রায় ১২ হাজার এবং এমআইটির এন্ডোমেন্ট মানি হলো প্রায় ২৪ বিলিয়ন ডলার। এটিও বর্তমান বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে বেশি। ছাত্র সংখ্যা ও এন্ডোমেন্ট রেশিও ৎধঃরড় একটা বিশাল ফ্যাক্টর। ঠিক তেমনি ছাত্র শিক্ষকের ৎধঃরড় একটি বড় ফ্যাক্টর। লিবারেল আর্টস কলেজের টিউশন ফী অনেক। বছরে ৬০ থেকে ৯০ লক্ষ টাকা। স্কলারশিপ না পেলে আমার কন্যা ওখানে পড়তে পারতো না। ওর জন্য বিকল্প ভেবে রেখে ছিলাম ইউরোপ। ইংল্যান্ড ব্যতীত ইউরোপের প্রায় সব দেশের লেখাপড়ার জন্য টিউশন ফী নাই বললেই চলে। শুধু থাকা খাওয়া নিজেদের। তারপরেও কিছু স্কলারশিপ আছে। ইউরোপের বিশেষ করে ইতালির বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আবাসিক হল নাই। ছাত্রছাত্রীরা নিজেরা বাসা ভাড়া করে মেস করে থাকে। আমার স্ত্রীও এইভাবে থেকেই লেখাপড়া করেছিল। 

এভাবে চিন্তা করলে আমরা সিলেক্টিভ কিছু কলেজকে লিবারেল আর্টস কলেজ হিসাবে তৈরি করতে পারি যেখানে শুধুই ৪ বছরের অনার্স পড়ানো হবে। যেখানে শিক্ষক নিয়োগ ক্রাইটেরিয়া হবে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগের মতো। কোনো কলেজেই মাস্টার্স পড়ানোর পারমিশন থাকবে না যদি না সেখানে গবেষক মানের শিক্ষক থাকে। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসকে শুধু মাস্টার্স পড়ানোর জন্য তৈরি করা যেতে পারে। সেজন্য যথেষ্ট মানসম্পন্ন শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া উচিত। আর বর্তমানে যেসব কলেজে অনার্স-মাস্টার্স পড়ানো হয় সেগুলোর একটি বড় অংশকে শুধু উচ্চ মাধ্যমিক এবং এইগুলোর ছোট একটি অংশকে উচ্চ মাধ্যমিক ও ডিগ্রি পাস কোর্স পড়ানোর জন্য পারমিশন দেওয়া যেতে পারে। লেখক: অধ্যাপক, পদার্থবিজ্ঞান বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়