
প্রকাশিত: Thu, May 30, 2024 3:04 PM আপডেট: Wed, Apr 30, 2025 12:20 AM
জিরাফ
স্বপন ভট্টাচার্য্য
কথায় বলে ‘ধর্মেও আছি, জিরাফেও আছি’। কেন? কেউ বলেন জিরাফ শয়তানের সৃষ্টি তাই তা অধর্ম। আবার কেউ বলেন বিবর্তনের মধ্যে দিয়েই জিরাফের সৃষ্টি, তাই এখানে জিরাফ মানে বিজ্ঞান। আর কে না জানে যে ধর্মের সঙ্গে বিজ্ঞানের বিরোধ সেই আদ্যিকাল থেকেই। যাই হোক, ওই প্রবাদের উৎস নিয়ে আলোচনা না করে এই দৃষ্টিনন্দন প্রাণিটির বিষয়ে আলোচনা করা যাক। জিরাফ একটি বন্যপ্রাণি। প্রাণী হিসেবে এরা খুবই নিরীহ। সাধারণত এরা অন্য কারো কোনও ক্ষতি করতে চায় না। তবে আক্রান্ত হলে অবশ্য রুখে দাঁ?ড়াতে জানে। তখন তাদের রুদ্র রূপকে সিংহও সমীহ করে চলে। মূলত আফ্রিকায় তাদের বাস। আফ্রিকার বিস্তীর্ণ খোলা তৃণভূমি অঞ্চলে তাদের বাস। একটা পূর্ণবয়স্ক পুরুষ জিরাফ দৈর্ঘ্যে প্রায় সাড়ে পাঁ?চ মিটার, ওজন প্রায় ১৯৩০ কেজি আর স্ত্রী জিরাফ প্রায় সাড়ে চার মিটার, ওজন ১১৮০ কেজি। পৃথিবীর বুকে আজও যে প্রাণিগুলো ঘুরে বেড়াচ্ছে তাদের মধ্যে সবচেয়ে লম্বা (উঁচু) প্রাণি হলো জিরাফ। এক একটা পুরুষ জিরাফ প্রায় কুড়ি ফুট লম্বা হয়ে থাকে। আর এই উচ্চতার জন্যই তারা বহুুদূর পর্যন্ত দেখতে পায়। এদের দৃষ্টি খুবই প্রখর। তাই এরা অনেক দূর থেকেই শত্রুকে চিহ্নিত করতে পারে। তাছাড়া এরা খুব জোরে দৌঁড়তে পারে। প্রয়োজনে ঘণ্টায় ষাট কিলোমিটার বেগেও এদের দৌঁড়াতে দেখা গিয়েছে। তা সত্ত্বেও প্রতি বছর অনেক জিরাফ সিংহের আক্রমণে প্রাণ হারায়। সিংহ জিরাফের মূল শত্রু হলেও হায়েনা এবং বুনো কুকুরও কিন্তু খুব একটা পিছিয়ে নেই। সিংহ অবশ্য পূর্ণবয়স্ক জিরাফকে আক্রমণ করতে চায় না।
কারণ এদের লাথির এতো জোর যে সেই লাথির আঘাতে সিংহের মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। তাই সিংহ সাধারণত শিকার করার জন্য কম বয়সী জিরাফ খুঁজে বেড়ায়। জিরাফ দলবদ্ধভাবেই থাকতে পছন্দ করে। তবে তারই মধ্যে কখনও ছোটো শাবকেরা দল থেকে বেরিয়ে গেলেই সিংহের আক্রমণের মুখে পড়ে যায়। কম বয়সী জিরাফের প্রায় অর্ধেকই সিংহের পেটে চলে যায়। এদের পা খুব লম্বা। আর গায়ে বাদামি রঙের দাগ দেখা যায়। আরও মজার বিষয় যে দুটি জিরাফের গায়ের দাগ কখনই এক রকম হয় না। এদের মাথার ওপর দুটো (বা চারটে) ছোটো ভোঁতা শিং থাকে। আর এদের শরীর থেকে মাথার দূরত্ব বেশি হওয়ায় তাদের গলাও খুব লম্বা। গলা খুব লম্বা হওয়ায় এদের যেমন উঁচু গাছ থেকে পাতা খেতে সুবিধা হয় তেমনি লম্বা পা হওয়ায় এদের জল খেতে খুবই অসুবিধা হয়। কারণ জলের কাছে পৌঁছাতে এদের সামনের পা দুটো দুই দিকে ছড়িয়ে শরীরটা নিচে নামিয়ে আনতে হয়। আর ঠিক জল খাওয়ার সময়েই সিংহ এবং কুমির এদের আক্রমণ করে সবচেয়ে বেশি। আর তাই এদের বাঁচিয়ে রাখতে প্রকৃতি এমন নিয়ম করেছে যে খুব অল্প জল খেলেই তাদের চলে যায়। অথবা তারা নিজেরাই নিজেদের সেভাবে তৈরি করে নিয়েছে। কোনও কোনও সময় টানা সাত দিন জল না খেয়েও এরা বেঁচে থাকতে পারে। তাছাড়া এরা সাধারণত যে সবুজ পাতা খায় সেই পাতার ভেতরের জলেই তাদের তৃষ্ণা মেটে। প্রসঙ্গত জানিয়ে রাখা যাক যে অ্যাকাশিয়া গাছের পাতা এদের খুবই পছন্দের খাবার। এদের খাবারের পরিমাণও কিন্তু নেহাত কম নয়। কারণ ‘শরীরটাকে তো রাখতে হবে’! একটা পূর্ণবয়স্ক পুরুষ জিরাফের দিনে অন্তত ৬৫ কেজি খাবারের প্রয়োজন হয়। আর অতো খাবার হজমের জন্য আছে এদের চারটে করে পাকস্থলী। মূল শরীর থেকে মাথা বেশ কিছুটা দূরে থাকায় মাথায় রক্ত পৌঁছে দিতে বেশ বড়ো একটা হার্টের (হৃদয়) প্রয়োজন হয়। বর্তমানে জীবিত প্রাণীদের মধ্যে সবচেয়ে বড়ো হৃদয়ের মালিক এই জিরাফেরা। জিরাফের হৃদয়ের ওজন ১২ কেজি। রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করার জন্য এদের দয়ে অতিরিক্ত ভাল্ব থাকে। পা লম্বা হওয়ায় এদের দাঁড়ানো অবস্থা থেকে বসতে যেমন সময় লাগে তেমনি বসা অবস্থা থেকে উঠে দাঁড়াতেও এরা সময় নেয় বেশি। আর শত্রু আক্রমণ করলে তৎক্ষণাৎ লাগাতে হবে ছুট অথবা রুখে দাঁড়াতে হবে তাই এরা কখনও বসে ঘুমোয় না যদিও দলের সঙ্গে থাকলে কখনও কখনও এদের কয়েকজনকে বসে থাকতে দেখা যায়। এদের ঘুম খুব কম। আর এরা যখন ঘুমোয় বা বিশ্রাম নেয় তখন দলের একজন কিন্তু পালা করে এদের পাহারা দেয়। এদের আর একটাগুণ এরা সাধারণত নিজেদের মধ্যে লড়াই করে না। অনেকে মনে করেন যে এরা বোবা প্রাণী।
এই ধারণাটা কিন্তু সঠিক নয়। তবে এদের আওয়াজ ২০ হার্জের নিচে হওয়ায় মানুষ এদের আওয়াজ শুনতে না পেলেও একটা জিরাফের আওয়াজ অন্য জিরাফগুলো ঠিকই শুনতে পায়। জিরাফ শাবক পূর্ণবয়স্ক হতে সময় নেয় চার থেকে পাঁ?চ বছর। এরপর থেকেই পুরুষ জিরাফ স্ত্রী জিরাফের খোঁজ করা শুরু করে দেয়। স্ত্রী জিরাফটির পুরুষ জিরাফটিকে পছন্দ হলে সে নিশ্চলভাবে দাঁড়িয়ে থাকে। এইভাবেই সে পুরুষটিকে সিগন্যাল দিয়ে দেয় যে সে তৈরি। মিলনের পর পুরুষ জিরাফের দায়িত্ব শেষ। মা জিরাফ এরপর পনেরো মাস গর্ভে ধারণ করার পর শাবকটির জন্ম দেয়। জন্মের সময় একটা শাবকের ওজন ৭০ থেকে ১০০ কেজি পর্যন্ত হতে পারে। ওই বিশাল ওজন গর্ভে ধারণ করা চারটিখানি কথা নয়। দাঁড়ানো অবস্থায় শাবকের জন্ম দেওয়ায় প্রায় ছয় ফুট লম্বা শাবকটি বেশ কিছুটা দূরে ছিটকে পড়ে। এরপর মা জিরাফ তার শাবকটিকে চাটতে শুরু করে। প্রসঙ্গত বলে রাখি যে জিরাফের জিভ প্রায় একুশ ইঞ্চি লম্বা হয়। এই জিভ দিয়ে তারা তাদের কান পর্যন্ত চুলকোতে পারে। শাবক চাটার পর্ব চলে প্রায় এক সপ্তাহ। এ হল মা আর শাবকের পরিচয় পর্ব। এই পর্বটি চলে একদম নিরালায়। মা এবং শাবক একে অন্যের গন্ধ চিনে নেবার পর মা শাবক সমেত দলের সঙ্গে যোগ দেয়। মায়ের সঙ্গে বা বলা ভালো যে মায়ের পাহারায় শাবকটি থাকে চার-পাঁ?চ বছর পর্যন্ত। সাধারণত একটা জিরাফ প্রায় ষোলো বছর বয়স পর্যন্ত বেঁচে থাকে। ছবি ও তথ্য: ইন্টারনেটের সৌজন্যে। ফেসবুক থেকে
আরও সংবাদ
চ্যাম্পিয়ন ভারত : একটা ছোট মুহূর্ত কতো বড় পার্থক্য গড়ে দিতে পারে
‘ওই ক্যাচ হয়নি, সুরিয়াকুমারকে আবার ক্যাচ ধরতে হবে’!
কতো দেশ, কতোবার কাপ জিতলো, আমাদের ঘরে আর কাপ এলো না!
সংগীতাচার্য বড়ে গোলাম আলি খান, পশ্চিমবঙ্গের গর্ব সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় ও আমি
ইন্ডিয়ান বুদ্ধিজীবী, ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্র ও দেশের বুদ্ধিজীবী-অ্যাক্টিভিস্ট
মতিউর প্রতিদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ৮৩ ব্যাচের বন্ধুদের গ্রুপে সৎ জীবন যাপনের উপদেশ দিতেন!

চ্যাম্পিয়ন ভারত : একটা ছোট মুহূর্ত কতো বড় পার্থক্য গড়ে দিতে পারে

‘ওই ক্যাচ হয়নি, সুরিয়াকুমারকে আবার ক্যাচ ধরতে হবে’!

কতো দেশ, কতোবার কাপ জিতলো, আমাদের ঘরে আর কাপ এলো না!

সংগীতাচার্য বড়ে গোলাম আলি খান, পশ্চিমবঙ্গের গর্ব সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় ও আমি

ইন্ডিয়ান বুদ্ধিজীবী, ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্র ও দেশের বুদ্ধিজীবী-অ্যাক্টিভিস্ট
