
প্রকাশিত: Mon, Jun 3, 2024 2:59 PM আপডেট: Tue, May 6, 2025 7:28 PM
বাক ও চিন্তার স্বাধীনতা, একটি পর্যালোচনা
ইমতিয়াজ মাহমুদ
[১] বাকস্বাধীনতা প্রসঙ্গে আবার একটা পোস্ট লেখা মনে হয় দরকার হয়ে পড়েছে। কেননা আমি একটা প্রবণতা দেখেছি যখনই আমি কারো কোনো বক্তব্যের সমালোচনা করি, আমাকে অনেকেই এসে মৃদু কণ্ঠে বলেন যে, কেন তাঁর তো এরকম কথা বলার স্বাধীনতা রয়েছে। অন্যভাবে বললে, অনেককেই আমি দেখেছি এমন কথা বলতে যেন কারো কথার সমালোচনা করা, হোক সে সমালোচনা তীব্র বা মৃদু, সেটা তার বাকস্বাধীনতায় হস্তক্ষে
প করা হয়ে গেলো। এই ধারণাটা ঠিক না। বাক ও চিন্তার স্বাধীনতার কথা যখন আমরা বলি, আমরা বলি যে বাকস্বাধীনতা হচ্ছে একটি কন্টেন্ট-নিউট্রাল বা বিষয় নিরপেক্ষ ধারণা। এর অর্থ হচ্ছে যে আপনি কী বয়স্য নিয়ে বলছেন সেটার ওপর আপনার স্বাধীনতা নির্ভর করবে না। আপনি যা ইচ্ছা তাই বলতে পারেন যতক্ষণ না আপনি অপরের ক্ষতির কারণ হচ্ছেন। এর পেছনে একটা যুক্তি হচ্ছে যে, সমাজে নতুন ধারণা, নতুন চিন্তা নতুন মতামত আসা যেন বন্ধ না হয় সেটা নিশ্চিত করতে হবে। সকলেই যারা যার মতামত প্রকাশ করবে, বিদ্যমান প্রচলিত ধারণাগুলিকে চ্যালেঞ্জ করবেÑ এভাবেই সভ্যতা এগিয়ে যাবেÑ এভাবেই সত্য নির্ধারণ হবে।
এই যে আমরা বলছি, নতুন ধারণা বা নতুন মতবাদ আসবে সেটা যদি আপনি নিশ্চিত করেন তাহলে দেখবেন যে নানা রকম লোকজন উদ্ভট মূল্যহীন সারবস্তুহীন নানারকম আজেবাজে কথাও বাজারে নিয়ে আসবে। এসব উদ্ভট ও অর্থহীন কথাকেও রুদ্ধ করা যাবে না। কেননা যতক্ষণ কেউ ওর কথাটা বা মতামতটা বা ধারণাটা সকলের সামনে উপস্থাপন না করে ততোক্ষণ তো আপনি বুঝতে পারছেন না যে ওর কথাটা ঠিক না বেঠিক, মূল্যবান নাকি মূল্যহীন বাজে কথা। সুতরাং সবাইকে বলতে দিতে হবে। আর একবার যখন কেউ এইরকম একটা নতুন মতামত উপস্থাপন করে, যে কেউ সেটাকে নিয়ে প্রশ্ন করতে পারে, সমালোচনা করতে পারে।
[২] অর্থাৎ মানুষের ধারণা, চিন্তা, মতামত এসবের মধ্যে সংঘর্ষ হবে। পরস্পর পরস্পরের ধারণাসমূহকে চ্যালেঞ্জ করবে, বাতিল করে দিতে চাইবে, খারিজ করে দিতে চাইবে। এইটাই হচ্ছে মতপ্রকাশের স্বাধীনতার কাজ করার পদ্ধতি- এভাবেই মানুষের ধারণা ও চিন্তাসমূহ বিকশিত হয়। কেউ একজন নতুন কিন্তু উদ্ভট কিছু একটা বললো আর সেটাকে আমার সম্মান করতে হবে, এটা কোনো উত্তম ধারণা নয়। বাকস্বাধীনতার ধারণাটাই হচ্ছে যে আপনি যেটাকে মহান ও অভিনব আইডিয়া মনে করছেন আরেকজন সেটাকে ফালতু বা তুচ্ছ বা বাতুলতা বলে উড়িয়ে চাইতে পারে, আপনি তার জবাব দিবেন ইত্যাদি। সভহ্যতা এভাবেই এগিয়ে যায়। আপনার কথাটা আমি চ্যালেঞ্জ করবো, আমার কথাটা আরেকজন চ্যালেঞ্জ করবে, কেউ আবার আপনার কথাটার পক্ষে দুইটা নতুন তথ্য বা যুক্তি উপস্থাপন করবে ইত্যাদি। এইরকম ধারণাসমূহের ঘাট প্রতিঘাতের মধ্যে দিয়েই সত্য নির্ধারণ হয় এবং যে ধারণাটা আজকে আপনারা সকলে মিলে ঠিক মনে করছেন কাল আবার কেউ সেইটাকেই চ্যালেঞ্জ করবে। সত্যকে প্রতিদিন এইরকম চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করেই প্রতিষ্ঠিত হতে হয়। যে সত্য এইরকম কঠিন আক্রমণ মোকাবেলা করতে পারে না সেটাকে সত্যি মানা কঠিন।
সুতরাং কেউ যখন আপনার মতামতকে কঠিনভাবে সমালোচনা করে, সে আপনার বাক ও চিন্তার স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করছে না।
বরং উল্টোটা, এরকম কঠিন সমালোচনা মানেই হচ্ছে যে সেই ব্যক্তিটি সমালোচক- সে তার নিজের বাক ও চিন্তার স্বাধীনতার চর্চা করছে এবং আপনাকেও সাহায্য করছে। কীসের সাহায্য? সাহায্য করছে আপনার মতামতের পক্ষে যেন আপনি নতুন যুক্তিনতুন তর্ক উপস্থাপন করতে পারেন। কেউ যদি আপনার কোন কথার পিঠে কোন নির্মম ও কঠোর সমালোচনা নিয়ে আসে, রাগ করবেন না, আপনি নিজের বক্তব্যটি সমালোচনা আলোকে আবার পড়ুন, পরীক্ষা করুন, চাইলে নিজের কথাটি ডিফেন্ড করুন।
[৩] এই সুযোগে আরেকটা প্রসঙ্গ বলে রাখি। আমার কথাটা আমি বলে দিলাম, তার বিপরীতে আপনি একটা মন্তব্য করলেন। সেই মন্তব্যটা শুনতে হবে এমন কোনো বাধ্যবাধকতা কিন্তু আমার নেই। আপনি আপনার কথা শোনার জন্যে কাউকে বাধ্য করতে পারেন না। পৃথিবীর সকলের কথা শোনার দায়িত্ব কারো নয়। পৃথিবীতে প্রতিদিন শত শত লোক নতুন নতুন কথা বলছে, সব আমাকে শুনতে হবে? না, আমার ইচ্ছা। আমি ছিয়ালে শুনব না চাইলে শুনব না। কিন্তু কেউ যদি আপনাকে আপনার কথাটা বলতে বাধা দেয়, তাইলে আমি ঠিকই গিয়ে আপনার পক্ষ হয়ে লড়বো, কথাটা যদি গোবরের মতো বাজে কথাও হয়। ওই কথাটা মনে রাখবেনÑ কথাটা ভল্টেয়ারের কথা বলেই বহুল প্রচলিত। আমি আপনার কথাটাকে ঠিক মনে করি না। কিন্তু সেই কথাটি বলার জন্যে আপনার যে অধিকার সেটার জন্য আমি রক্তপাতও করতে পারি। লেখক: আইনজীবী। ৩১-৫-২৪। ফেসবুক থেকে
আরও সংবাদ
চ্যাম্পিয়ন ভারত : একটা ছোট মুহূর্ত কতো বড় পার্থক্য গড়ে দিতে পারে
‘ওই ক্যাচ হয়নি, সুরিয়াকুমারকে আবার ক্যাচ ধরতে হবে’!
কতো দেশ, কতোবার কাপ জিতলো, আমাদের ঘরে আর কাপ এলো না!
সংগীতাচার্য বড়ে গোলাম আলি খান, পশ্চিমবঙ্গের গর্ব সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় ও আমি
ইন্ডিয়ান বুদ্ধিজীবী, ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্র ও দেশের বুদ্ধিজীবী-অ্যাক্টিভিস্ট
মতিউর প্রতিদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ৮৩ ব্যাচের বন্ধুদের গ্রুপে সৎ জীবন যাপনের উপদেশ দিতেন!

চ্যাম্পিয়ন ভারত : একটা ছোট মুহূর্ত কতো বড় পার্থক্য গড়ে দিতে পারে

‘ওই ক্যাচ হয়নি, সুরিয়াকুমারকে আবার ক্যাচ ধরতে হবে’!

কতো দেশ, কতোবার কাপ জিতলো, আমাদের ঘরে আর কাপ এলো না!

সংগীতাচার্য বড়ে গোলাম আলি খান, পশ্চিমবঙ্গের গর্ব সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় ও আমি

ইন্ডিয়ান বুদ্ধিজীবী, ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্র ও দেশের বুদ্ধিজীবী-অ্যাক্টিভিস্ট
