
প্রকাশিত: Fri, Dec 30, 2022 3:38 PM আপডেট: Sun, Jun 29, 2025 7:32 PM
একান্ন বছর পরও আমাদের দৃষ্টি কেবল পেছনের দিকে
অধ্যাপক ড. কামরুল হাসান মামুন
‘৪২ বছর পরেও নামেই মহাকাশ গবেষণা প্রতিষ্ঠান’। বাংলাদেশ মহাকাশ গবেষণা ও দূর অনুধাবন প্রতিষ্ঠান যাকে সংক্ষেপে স্পারসো সেটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে আজ থেকে ৪২ বছর আগে। বাংলাদেশের অন্যান্য সব শিক্ষা ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের মতো জন্মের পর থেকে এটিকেও পধংঃৎধঃবফ বা খোজা বানিয়ে রাখা হয়েছে। স্পারসোর চেয়ারম্যান কে? বাংলাদেশ যারা চালায় তারা এটি সফল হোক সেটি চায় কী চায় না এইটা বোঝার জন্য হলেও এই প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান কে দেখুন। মন্ত্রণালয়ের একজন অতিরিক্ত সচিব। অথচ এর চেয়ারম্যান হওয়ার কথা দেশ সেরা ওই বিষয়ের একজন গবেষক। আমাদের উচ্চ শিক্ষা ও গবেষণা কেন এতো খারাপ অবস্থা তা বোঝার জন্য এই একটি মাত্র তথ্যই যথেষ্ট। আরও ভালোভাবে বোঝার জন্য এর বাজেট বরাদ্দ দেখলেও টের পাবেন। যেভাবে স্পারসো চলছে এইভাবে চললে ৪২ বছর কেন ৪২০০ বছর পরেও কেবল নামেই গবেষণা প্রতিষ্ঠান থাকবে। কাজে না।
একই কথা বলা চলে আমাদের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ক্ষেত্রে। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সবচেয়ে বড় পদ হলো ভিসি। সেই পদটিতে সরকার কাদের নিয়োগ দেন। আমাদের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি কারা হবে তাদের লিস্ট তৈরি হয় আমাদের মন্ত্রণালয়ের নেতৃত্বে। পৃথিবীতে এমন পদ্ধতি কোথাও আছে? ভিসি নিয়োগের জন্য ভিসিদের চেয়ে বড় মাপের মানুষদের সমন্বয়ে একটি খোঁজ ঃযব ংবধৎপয কমিটি করতে হয়। যারা খুঁজবে তাদের যোগ্যতা অবশ্যই যাকে খুঁজবে তার চেয়ে বেশি হতে হয়। কিন্তু আমাদের দেশে হয় উল্টো। বাংলাদেশের মন্ত্রণালয়ের অধীনে কোনো কিছু কি আজ পর্যন্ত সফল হয়েছে? হয় না কারণ এদের আসল কাজ হওয়ার কথা ফ্যাসিলিটেটর হিসাবে কাজ করা। কিন্তু তারা হয়ে গেছে সকল বিষয়ের বিশেষজ্ঞ। আমরা আমাদের প্রতিষ্ঠান ঠিক করে, সেই প্রতিষ্ঠান থেকে যোগ্য উচ্চ মানের গবেষক তৈরি না করে আমরা বিপুল অর্থ ব্যয়ে বিদেশী এক্সপার্টদের ওপিনিয়ন ও বিদেশী প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে দেশের মেগা মেগা প্রজেক্ট বাস্তবায়ন করেছি। যেমন আমরা স্যাটেলাইট পাঠিয়েছি যার সাথে দেশের কোনো বিজ্ঞানীর সংশ্লিষ্টতা ছিল না। আমরা রূপপুরে নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্লান্ট বানাচ্ছি যার সাথে দেশের কোনো বিজ্ঞানীর সংশ্লিষ্টতা ছিলো না, আমরা মেট্রোরেল বানিয়েছি যার সাথে দেশের বিজ্ঞানী বা বিশেষজ্ঞের কোনো সংশ্লিষ্টতা ছিলো না। বিশাল বিশাল অংকের টাকা দিয়ে বিদেশি কোম্পানি বা বিশেষজ্ঞদের মতামত বা বুদ্ধি দিয়ে দেশের এইসব মেগাপ্রকল্প করেছি। অথচ এই টাকা যদি প্রথমে মানুষ তৈরির কাজে ব্যবহার করে সেই মানুষদের দ্বারা কাজগুলো করতাম তাহলে এই প্রকল্পগুলো আরো কম খরচে বেশি ভালো মানের হতো।
ভারতের মেট্রোরেল তৈরিতে কি বিদেশী এক্সপার্ট বা বিশেষজ্ঞদের নেতৃত্বে করেছে? ভারতের নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্ল্যান্ট কি বিদেশী এক্সপার্ট বা বিশেষজ্ঞদের নেতৃত্বে করেছে? ভারতের স্যাটেলাইট কি বিদেশী এক্সপার্ট বা বিশেষজ্ঞদের নেতৃত্বে পাঠিয়েছে? যতোদিন না নিজেদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো উচ্চ মানের না বানাবো ততোদিন উচ্চ মানের মানুষ তৈরি হবে না। দৈবক্রমে তৈরি হয়ে গেলেও তারা দেশে থাকবে না। কারণ তাদের মূল্যায়ন করার মানুষও আমরা তৈরি করতে পারিনি। চারিদিকে তাকিয়ে দেখুন কারা বিভিন্ন বড় বড় প্রতিষ্ঠানের নেতৃত্ব দিচ্ছে। আসলে আমাদের মন্ত্রীপরিষদ আর এমপিদের মান দেখুন। তাহলেই সব ফকফকা হয়ে যাবে। দিন শেষে তারাইতো দেশ গড়বে। তারাইতো দেশের স্থপতি। সেই স্থপতিরা যদি উচ্চ মানের শিক্ষিত ও আলোকিত না হয় দেশ কিভাবে সুন্দর হবে। সবাই না হউক অন্তত গড় মানতো ভালো হতে হবে। গড় মান যে খুবই নিম্নমানের সেটা তাদের বক্তৃতা, তাদের রাজনৈতিক পোস্টার ইত্যাদি দেখলেই তাদের জ্ঞান আর রুচির স্পষ্ট ধারণা পাওয়া যায়। দুর্ভাগ্য এই জাতির যে ৫১ বছর পরেও আমাদের দৃষ্টি কেবল পেছনের দিকে। লেখক: শিক্ষক, পদার্থবিজ্ঞান বিভাগ, ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়
আরও সংবাদ
চ্যাম্পিয়ন ভারত : একটা ছোট মুহূর্ত কতো বড় পার্থক্য গড়ে দিতে পারে
‘ওই ক্যাচ হয়নি, সুরিয়াকুমারকে আবার ক্যাচ ধরতে হবে’!
কতো দেশ, কতোবার কাপ জিতলো, আমাদের ঘরে আর কাপ এলো না!
সংগীতাচার্য বড়ে গোলাম আলি খান, পশ্চিমবঙ্গের গর্ব সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় ও আমি
ইন্ডিয়ান বুদ্ধিজীবী, ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্র ও দেশের বুদ্ধিজীবী-অ্যাক্টিভিস্ট
মতিউর প্রতিদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ৮৩ ব্যাচের বন্ধুদের গ্রুপে সৎ জীবন যাপনের উপদেশ দিতেন!

চ্যাম্পিয়ন ভারত : একটা ছোট মুহূর্ত কতো বড় পার্থক্য গড়ে দিতে পারে

‘ওই ক্যাচ হয়নি, সুরিয়াকুমারকে আবার ক্যাচ ধরতে হবে’!

কতো দেশ, কতোবার কাপ জিতলো, আমাদের ঘরে আর কাপ এলো না!

সংগীতাচার্য বড়ে গোলাম আলি খান, পশ্চিমবঙ্গের গর্ব সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় ও আমি

ইন্ডিয়ান বুদ্ধিজীবী, ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্র ও দেশের বুদ্ধিজীবী-অ্যাক্টিভিস্ট
