প্রকাশিত: Mon, Jul 1, 2024 3:22 PM আপডেট: Tue, Sep 17, 2024 9:02 PM
ইন্ডিয়ান বুদ্ধিজীবী, ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্র ও দেশের বুদ্ধিজীবী-অ্যাক্টিভিস্ট
পারভেজ আলম : আমার বন্ধুদের ব্রডার সার্কেলে একটা ইন্ডিয়ান ছেলে ছিল। তবে তার সাথে আমার সাধারণত কালেভদ্রে দেখা হইতো (যেমন, মিউচুয়াল কোনো বন্ধুর জন্মদিনের অনুষ্ঠানে)। তো, কিছুদিন আগে আমার একজন জার্মান বন্ধু আমারে জিজ্ঞাস করেছে যে, ওই ইন্ডিয়ান ছেলেটির ব্যাপারে আমার কোনো পর্যবেক্ষণ আছে কি না। তো, আমি ব্যক্তিগতভাবে ওই ছেলেটাকে পছন্দ করতাম না, কারণ সে একেবারেই দেশি স্টাইলে আমারে অপমান করার চেষ্টা করেছে একাধিকবার। কিন্তু এইটা ব্যক্তি হিসাবে আমাকে অপমানের চেষ্টা হিসাবেই ধরে নিছি (বাংলাদেশি বা মুসলমানদের সে ঘৃণা করে কিনা, তা নিশ্চিত ছিলাম না। ওর সাথে আমি কখনো তেমন কোনো আলাপই করি নাই)।
সুতরাং আমি তার বিরুদ্ধে কখনো ফ্যাসিজম বা রেসিজমের অভিযোগও আনি নাই। তো, ওই জার্মান বন্ধু তখন এই প্রশ্নের পেছনে কারণ জানাইলেন। এই ইন্ডিয়ান ছেলেটার বিরুদ্ধে আমাদের আরেক জার্মান বন্ধু বেশ কঠোর অবস্থান নিয়েছে। তার সাথে দুর্ব্যবহারও করেছে এবং কারণ জানতে চাইলে বলেছে যে, হি ইজ দা এনিমি। কারণ সে হিন্দুত্ববাদী ফ্যাসিস্ট এবং আমার প্রশ্নকর্তা বন্ধুটিও যাচাই করে খানিকটা নিশ্চিত হয়েছে। সে হিন্দুত্ববাদের বেশি কিছু জানে না। তবে ওই ছেলের মুখে সর্বপ্রাচীনতা সংক্রান্ত নানান দাবি এবং সাম্প্রতিক কিছু মুসলমান বিদ্বেষী মন্তব্য শুনে নিশ্চিত হতে পেরেছে যে এই ছেলেটা ফ্যাসিস্ট। ইন্ডিয়ার ফ্যাসিস্ট ইডিয়টরা গর্বিতভাবে যে ধরনের রেটোরিক ব্যবহার করে, পাশ্চাত্যে তার বেশির ভাগই টেক্সটবুক ফ্যাসিবাদী রেটোরিক হিসাবে পরিচিত। তো, এখন নিশ্চয় বুঝতে পারতাছেন যে ওই ইন্ডিয়ান ছেলেটি আমাদের সার্কেলে ছিল (পাস্ট টেন্সে)। কেন বললাম?
সম্প্রতি অমর্ত্য সেন পরিষ্কার ভাষায় হিন্দুত্ববাদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন। কিন্তু এটাতো আরো কয়েক বছর আগেই নেয়া উচিত ছিল। এতো দেরি করে কেন? কারণ হলো যে সাম্প্রতিক বছরগুলাতে পাশ্চাত্যের বামপন্থী ও লিবারাল সিভিল সোসাইটিতে হিন্দুত্ব ফ্যাসিবাদের ব্যাপারে সচেতনতা সৃষ্টি হয়েছে, যা আগে অতোটা ছিল না। ফলে আন্তর্জাতিক পরিসরে কাজ করা বা বৈশ্বিক সিভিল সোসাইটির অংশ হিসাবে ফাংশন করা ইন্ডিয়ানদের পক্ষে আর ইন্ডিয়ায় উত্থিত ফ্যাসিবাদকে আর হালকাভাবে নেয়ার উপায় নাই। অমর্ত্য সেন জাস্ট অনেক বড় উদাহরণ মাত্র। আমি নিজে একাধিক স্কলার ও শিল্পীকে চিনি, যারা বছর দুই আগেও শ্রেফ হতাশা প্রকাশ করে দায় সারতো। কিন্তু এখন তারা মোদির বিরুদ্ধে শক্ত এন্টি-ফ্যাসিস্ট অবস্থান গ্রহণ করেছে। দিনশেষে এটা তাদের মান ইজ্জতের সওয়াল।
কিন্তু তাই বলে মনে করবেন না যে, ইন্ডিয়ার বুদ্ধিজীবীরা বাংলাদেশের পক্ষে কিছু বলবে বা করবে। অন্তত এখনো করবে না। কেননা বাংলাদেশ তাদের ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্রের অন্যতম ভিক্টিম হলেও বাংলাদেশের পক্ষে কথা বলার জন্যে তাদের তেমন কোনো প্রেশার নাই। ধরেন, বছর খানেক আগেও তো মধ্যপ্রাচ্যের সবচাইতে মজলুম জাতির পক্ষে বড় গলায় কথা বলবার মতো লোক কম ছিল। আর আজকে এই জাতির পক্ষে কথা বলাটাই প্রগতিশীলতা। বাংলাদেশের পক্ষে কথা বলাটা যতোদিন ইন্ডিয়ান লিবারাল ও বামদের কাছে প্রগতিশীলতার চিহ্নে পরিণত হচ্ছে, ততক্ষণ তারা বাংলাদেশের পক্ষে তেমন কোনো অবস্থান নেবেন না (মনে মনে ইচ্ছা থাকলেও না)। দায়িত্বটা দিনশেষে বাংলাদেশের লেখক, বুদ্ধিজিবী ও অ্যাক্টিভিস্টদের। তারা তাদের কাজটা করলে ইন্ডিয়াতো বটেই, সারা দুনিয়ার বাম-প্রগতিশীলরাই আমাদের পক্ষে থাকবেন। যেমন, একাত্তরে ছিলেন। ২৯-৬-২৪। ফেসবুক থেকে