
প্রকাশিত: Fri, Jan 6, 2023 4:41 PM আপডেট: Sun, Jun 29, 2025 9:33 AM
আমার মন পড়ে থাকে বাংলাদেশে
আমিনুল ইসলাম
আমি যে দেশে থাকি, সে দেশে আপনি যদি একটি কোম্পানি খুলতে চান, তাহলে সব মিলিয়ে আপনার ১৫ মিনিট লাগবে। আসলে এর চাইতেও কম সময় লাগে। ধরুন আপনার এখন মনে হলোÑ ব্যবসা শুরু করবেন। আপনাকে কোথাও যেতে হবে না। ঘরে বসে কয়েক মিনিটের মাঝেই আপনি আপনার কোম্পানি রেজিস্টার করে ফেলতে পারবেন এবং এখনই ব্যবসা শুরু করতে পারবেন। এটা যে শুধু এই দেশের নাগরিকদের জন্য; এমন কিন্তু না। আপনি চাইলে পৃথিবীর যেকোনো দেশে বসে এই দেশেরই রেসিডেন্ট হয়ে যেতে পারবেন। ওরা আপনাকে ই-রেসিডেন্ট পারমিটও দেবে। আপনি অন্য দেশে বসে এই দেশে ব্যবসা বাণিজ্য করতে পারবেন।
আমাদের এখানে গণপরিবহণ সম্পূর্ণ ফ্রি। অর্থাৎ আপনি শহরের এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে যেকোনো বাস-ট্রামে চড়ে যেতে পারবেন। আপনাকে এক পয়সাও দিতে হবে না। এর চাইতেও বড় বিষয় হচ্ছে আপনার বাসা থেকে বাস স্টপের দূরত্ব হাঁটা পথে কখনো ৮-১০ মিনিটের বেশি হবে না। অর্থাৎ একটু পর পর বাস স্টপেজ আছে। আপনি শহরের যেকোনো জায়গায় বাসে করেই যেতে পারবেন। আপনার আর কোনো পরিবহনের দরকার নেই।
আমাদের চিকিৎসা ফ্রি। সবার নিজস্ব ফ্যামিলি ডাক্তার আছে। সমস্যা হলে আমরা ডাক্তারের কাছেও যাই না। তার কাছে আমাদের সকল কিছুর ডাটা আছে। আমি তো স্রেফ মেইল করে লিখিÑ আমার এই সমস্যা হচ্ছে। এরপর ডাক্তার যদি মনে করেন, তার কাছে যেতে হবে। তখন যাই। নইলে ইমেইলে তিনি প্রেসক্রিপশন করে দেন। আমরা স্রেফ ফার্মেসিতে গিয়ে আমাদের আইডি কার্ড দেখালে ওষুধ দিয়ে দেয়। ধরুন আপনি একজন মেয়ে। মাঝ রাতে কোনো জরুরি প্রয়োজনে আপনাকে কোথাও একা বের হতে হবে। এই শহরে আপনি চোখ বন্ধ করে মাঝ রাতে যেকোনো জায়গায় যেতে পারবেন। আপনি নিশ্চিত থাকুন, আপনার কোনো বিপদ হবে না।
এই দেশে পড়াশোনা ফ্রি। উল্টো সরকারই ছাত্র-ছাত্রীদের টাকা দেয় বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায় পর্যন্ত। আর আপনি যদি বিদেশ থেকে এখানে পড়তে আসেন। তাহলেও খুব বেশি না টিউশন ফি। বাংলাদেশের অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ের চাইতে অনেক কম। আর পড়াশোনা শেষ করে আপনাকে বসে থাকতে হবে না। এই দেশে বেকার সমস্যা নেই বললেই চলে। আপনি নিশ্চিত থাকুন আপনি একটা না একটা চাকরি পাবেনই। বাংলাদেশ থেকে আসা আমার ছাত্র-ছাত্রীরাই তো এই দেশে এসে পড়াশোনা শেষ করে অনেক ভালো ভালো চাকরি করছে। যেটা হয়তো বাংলাদেশে করা সম্ভব হতো না।
এখানে আমরা ভোট দিতে পারি অন লাইনে (অবশ্য আপনাকে নাগরিক হতে হবে)। এটি পৃথিবীর প্রথম ই-কান্ট্রি। এখানে সকল কাজ অন লাইনে করা যায়। আমরা আমাদের সিগনেচারটা পর্যন্ত ডিজিটালি দেই। আমি যখন আমার নিজের এপার্টমেন্ট কিনেছিলাম; আমাকে ব্যাংক থেকে লোন নিতে হয়েছে। এই পুরো প্রক্রিয়ার কোন পর্যায়ে আমাকে কোথাও যেতে হয়নি। আমি আমার বাসায় থেকেই সব করে ফেলেছি! শুনেছি আমার এক ছাত্র এই দেশের সব চাইতে বড় টুরিস্ট স্পটে একটা রেস্তরাঁর ব্যবসা দিয়েছে। আমি নিশ্চিত এই ব্যবসা করতেও তাকে কোথাও যেতে হয়নি। সে সকল কিছুর রেজিস্ট্রেশন ঘরে বসেই করে ফেলেছে। এখানকার মানুষের ক্রয় ক্ষমতা ভালো। অর্থাৎ আপনি যদি সুইপার হন কিংবা বড় কর্তা। আপনি যে টাকা ইনকাম করবেন, সে টাকা দিয়ে আপনি ভালো ভাবে খেয়ে পড়ে থাকতে পারবেন। বিকেল বেলা ঘুরতে বের হতে পারবেন। সন্ধায় রেস্তোরাঁয় যেতে পারবেন। মাসে একবার বিদেশ ভ্রমণেও যেতে পারবেন। প্রতি মাসে যেতে না পারলেও অন্তত ছয় মাস পর পর নিশ্চিতভাবেই পারবেন। অর্থাৎ এখানে আয়ের বৈষম্য অনেক কম।
উত্তর মেরুর এই দেশে বছরে ছয় মাস থাকে ভীষণ ঠাণ্ডা। যেমন এই মুহূর্তে আমরা আছি মাইনাস ১৫ ডিগ্রি তাপমাত্রায়। ছয় মাস আমাদের হিমাঙ্কের নিচেই থাকতে হয়। চারদিকে হিমশীতল পরিবেশ। ক্রমাগত তুষার পড়ছে এবং সূর্যের আলো দেখা যায় না বললেই চলে। তবে বাসা-বাড়ি থেকে শুরু করে সকল স্থাপনা এমন ভাবে বানানো; আপনি নিশ্চিত থাকুন বাংলাদেশে বসে আপনি এই মুহূর্তে যেমন শীত অনুভব করছেন। আমি এর চাইতে অনেক কম অনুভব করছি।
আবার গ্রীষ্মকালে চমৎকার পরিবেশ থাকে। তাপমাত্রা থাকে ১৫ থেকে ২৫ ডিগ্রির মাঝে। রাত ১২টা, রাত তিনটার সময়ও সূর্য মাথার উপর থাকে। বালটিকের দেশ গুলোর মাঝে এটিই সব চাইতে ধনী দেশ। ধরুন আপনি রেস্টুরেন্টে গেলেন খেতে। আপনার পাশের টেবিলে বসে যে খাচ্ছে, তার সাথে আপনার কথা হলো। সেও খাচ্ছে। আপনিও খাচ্ছেন। চলে যাবার সময় আপনি জানতে পারলেনÑ সে হচ্ছে এই দেশের একজন মন্ত্রি! অথচ কেউ তাকে দুই পয়সার মূল্যও দিচ্ছে না। কারণ রেস্তোরাঁয় আপনি এবং ওই মন্ত্রীর মর্যাদা একদম সমান। কেউ ফিরেও তার দিকে তাকাচ্ছে না। আপনিও কাস্টমার। সেও কাস্টমার।
এত সব সুবিধা। বাংলাদেশ থেকে আপনি যখন এই লেখা পড়বেন, আপনার হয়তো মনে হবে কোনো স্বর্গলোকের কথা বলছে। অথচ এই আমার মন পড়ে থাকে বাংলাদেশে। সব থেকেও মনে হয়Ñ কী যেন একটা নেই। ফেসবুক থেকে
আরও সংবাদ
চ্যাম্পিয়ন ভারত : একটা ছোট মুহূর্ত কতো বড় পার্থক্য গড়ে দিতে পারে
‘ওই ক্যাচ হয়নি, সুরিয়াকুমারকে আবার ক্যাচ ধরতে হবে’!
কতো দেশ, কতোবার কাপ জিতলো, আমাদের ঘরে আর কাপ এলো না!
সংগীতাচার্য বড়ে গোলাম আলি খান, পশ্চিমবঙ্গের গর্ব সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় ও আমি
ইন্ডিয়ান বুদ্ধিজীবী, ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্র ও দেশের বুদ্ধিজীবী-অ্যাক্টিভিস্ট
মতিউর প্রতিদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ৮৩ ব্যাচের বন্ধুদের গ্রুপে সৎ জীবন যাপনের উপদেশ দিতেন!

চ্যাম্পিয়ন ভারত : একটা ছোট মুহূর্ত কতো বড় পার্থক্য গড়ে দিতে পারে

‘ওই ক্যাচ হয়নি, সুরিয়াকুমারকে আবার ক্যাচ ধরতে হবে’!

কতো দেশ, কতোবার কাপ জিতলো, আমাদের ঘরে আর কাপ এলো না!

সংগীতাচার্য বড়ে গোলাম আলি খান, পশ্চিমবঙ্গের গর্ব সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় ও আমি

ইন্ডিয়ান বুদ্ধিজীবী, ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্র ও দেশের বুদ্ধিজীবী-অ্যাক্টিভিস্ট
