প্রকাশিত: Sun, Jan 8, 2023 2:58 PM
আপডেট: Sun, Jun 29, 2025 11:31 AM

বর্ণবাদী পদবি প্রসঙ্গে

মাসুদ রানা

কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য ‘মেয়েদের পদবী’ নামে একটি নারী-বিদ্বেষী কবিতা লিখেছিলেন, যদিও তিনি মহা সাম্যবাদী বিপ্লবী ছিলেন! কবিতাটি নিম্নরূপÑ মেয়েদের পদবীতে গোলমাল ভারী/অনেকের নামে তাই দেখি বাড়াবাড়ি/‘আ’কার অন্ত দিয়ে মহিলা করার/চেষ্টা হাসির। তাই ভূমিকা ছড়ার/‘গুপ্ত’ ‘গুপ্তা’ হয় মেয়েদের নামে/দেখেছি অনেক চিঠি পোস্টকার্ড, খামে/সে নিয়মে যদি আজ ‘ঘোষ’ হয় ‘ঘোষা’/তা হলে অনেক মেয়ে করবেই গোসা/‘পালিত’ ‘পালিতা’ হলে ‘পাল’ হবে ‘পালা’/নির্ঘাৎ বাড়বেই মেয়েদের জ্বালা/‘মল্লিক’ ‘মল্লিকা’, ‘দাস’ হলে ‘দাসা’

শোনাবে পদবীগুলো অতিশয় খাসা/‘কর’ যদি ‘করা’ হয় ‘ধর’ হয় ‘ধরা’/মেয়েরা দেখবে এই পৃথিবীটাÑ ‘সরা’/‘নাগ’ যদি ‘নাগা’ হয় ‘সেন’ হয় ‘সেনা’/বড়োই কঠিন হবে মেয়েদের চেনা।যাহোক, নামের পদবীতে নারী-পুরুষ পার্থক্য যতো না বুঝা যায়, তারও চেয়েও অধিক বুঝা যায় উচ্চ-নিম্ন বর্ণ-পার্থক্য। যেমন, ‘ভট্টাচার্য’ বা ‘চট্টোপাধ্যায়’ পদবী যেখান উচ্চবর্ণের বিবেচিত, ‘শীল’ বা ‘জলদাস’ সেখানে নিম্নবর্ণের। এভাবেই নামকরণের মধ্যেই রয়েছে বর্ণবাদ। শুরুতে বর্ণ-বৈষম্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছিলো শ্রম-বিভাজনে তথা কামে, যা এখন আগের মতো নেই। অর্থাৎ পেশা দেখে বর্ণ নিরূপণ ঠিক আগের মতো সম্ভব নয় এবং হয়তো একসময় অসম্ভব হয়ে উঠবে। আর তখন বর্ণ চেনা যাবে শুধু নামের পদবী দেখে। তাই, বর্ণ-ভিত্তিক সারনেইম বা পদবী  টিকে থাকলে বর্ণবৈষম্যের নিরসন সম্ভব নয়। ভারতীয় উপমহাদেশে বর্ণবৈষম্য নিরসনে নামের শেষাংশ বা পদবীর (ংঁৎহধসব) বিলোপ করুন কিংবা স্বাধীন করে দিন। দলিতকেও নামের আগে মীর, সৈয়দ কিংবা নামের শেষে ঠাকুর, ভট্টচার্য ইত্যাদি লিখতে দিন। জুতো সেলাই-করা তথাকথিত চামারের নাম হোক গুরুচরণ চট্টোপাধ্যায় কিংবা সৈয়দ গুরুচরণ চৌধুরী। আর, নর্দমা সাফ-করা তথাকথিত মেথরের নাম হোক মীর গণেশ উদ্দিন কিংবা গণেশ ভট্টাচার্য। পারবেন কেউ? মানবেন কেউ? দেখবেন, ভয়ঙ্কর প্রগতিশীলেরাও বর্ণদাঙ্গা বাঁধিয়ে দেবে। দেবে না? লণ্ডন, ইংল্যাণ্ড