প্রকাশিত: Fri, Aug 2, 2024 10:55 AM আপডেট: Tue, Sep 17, 2024 9:53 PM
[১]নির্যাতন যত বাড়বে, গণপ্রতিরোধ ততোই দুর্বার হবে: মির্জা ফখরুল
সালেহ্ বিপ্লব: [২] বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, এই সরকার আজ রাষ্ট্রঘাতী-প্রাণঘাতী সরকারে পরিণত হয়েছে। গণধিকৃত সরকারকে বিদায় করে জাতির সকল সমস্যা সমাধানের রাজনৈতিক পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে। ছাত্র-জনতার বিক্ষোভের মুখে ক্ষমতায় থাকতে পারবে না এই শাসকগোষ্ঠী। অতি দ্রুত পদত্যাগ করে জনতার ক্ষমতা জনতার কাছে ফিরিয়ে দিন।
[৩] শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে সরকারের অব্যাহত বাধা, গুলি, দমন, নিপীড়ন, গ্রেপ্তার-নির্যাতনের নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে তিনি এ কথা বলেন।
[৪.১] বিএনপি মহাসচিব বলেন, দেশ-বিদেশের কোন পরামর্শ কর্ণপাত না করে ফ্যাসিস্ট সরকার আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী দিয়ে মামলা, হামলা, দমন , নিপীড়ন চালিয়ে যাচ্ছে। গতকাল বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শান্তিপূর্ণ ‘মার্চ ফর জাস্টিস’ কর্মসূচিতে পুলিশ ঢাকা, সিলেট, খুলনা, বরিশাল, রাজশাহী, দিনাজপুর, গাজীপুর, যশোর, ঠাকুরগাঁও, মাগুরা, নরসিংদীসহ বিভিন্ন জায়গায় বর্বরোচিত কায়দায় সাউন্ড গ্রেনেড, টিয়ার সেল নিক্ষেপ, লাঠিচার্জ এবং গ্রেপ্তার চালিয়েছে। সারাদেশে প্রায় শতাধিক নিরীহ ছাত্র-ছাত্রীদের গ্রেপ্তার করেছে, ছাত্রীদের করেছে লাঞ্ছিত।
[৪.২] পুলিশের নির্মম আঘাত থেকে রক্ষা পান নাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় লোক প্রশাসন বিভাগের শিক্ষক শেহরীন আমিন ভূঁইয়া। বরিশালে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর নির্মম নির্যাতনের শিকার হয় যুগান্তরের সাংবাদিক শামীম আহমেদ এবং যমুনা টিভির ক্যামেরাম্যান হৃদয়সহ অসংখ্য ছাত্র-ছাত্রী। সরকার এবং সরকারি বাহিনী এমনভাবে মিথ্যাচারে নিমজ্জিত হয়ে গেছে, সারা বিশ্বের মানুষ যেখানে দেখেছে আবু সাঈদকে পুলিশ সরাসরি সামনে থেকে গুলি করে হত্যা করেছে, সেই মামলায় আসামি করে গ্রেপ্তার করে জেলে পাঠিয়েছে রংপুর পুলিশ লাইনস স্কুল এন্ড কলেজের একাদশ শ্রেণির ছাত্র আলিফ শাহারিয়ার মাহিমকে।
[৫] মির্জা ফখরুল বলেন, সরকারপ্রধান এবং মন্ত্রী-নেতারা এবং আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর কতিপয় আওয়ামী ভাবাপন্ন সদস্যরা প্রতিনিয়ত মিথ্যাচারে আশ্রয় নিয়ে বলছে, তথাকথিত তৃতীয় শক্তি নাকি গুলি করে হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছে। অথচ সারা বিশ্বের মানুষ দেখেছে ছাত্রসহ সাধারণ জনতার কাছে আগ্নেয়াস্ত্র ছিল না। তা ছিল আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এবং সরকারি দলের অঙ্গ সংগঠন ছাত্রলীগ, যুবলীগের হাতে। তারপরও সরকার শাক দিয়ে মাছ ঢাকার জন্য মিথ্যচারের কোরাস গেয়েই চলেছে। তৃতীয় শক্তি না খুঁজে নিজেদের অপশক্তিকে চিহ্নিত করুন।
[৬] বিবৃতিতে তিনি বলেন, এই বর্বর অবৈধ সরকার সভ্য মানুষের উপদেশ কখনোই গ্রহণ করবে না। কারণ তারা অবৈধ ক্ষমতা টিকিয়ে রাখতে গণহত্যা চালিয়ে বর্বর শাসন কায়েম করে যেভাবেই হোক ক্ষমতায় থাকার পরিকল্পনা গ্রহণ করছে।
[৭] তিনি দেশের আপামর জনতা ছাত্র-যুবকসহ সব শ্রেণি-পেশার মানুষের প্রতি আন্দোলন অব্যহত রাখার আহ্বান জানিয়ে বলেন, দেশের আনাচে-কানাচে ঘরে ঘরে আজ খুনী সরকারের পদত্যাগের দাবি উচ্চারিত হচ্ছে। গণতন্ত্র হত্যাকারী, জনঅধিকার হরণকারী, জাতীয় স্বার্থ ও সার্বভৌমত্ব বিপন্নকারী সরকার স্বাধীন বাংলাদেশের ইতিহাসে নজিরবিহীন গণহত্যা ও নিষ্ঠুর দমন নিপীড়ন চালিয়েছে।
[৮] মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ছাত্র জনতার আন্দোলনে সরকার এতই ভীতসন্ত্রস্ত এবং জনবিচ্ছিন্ন হয়েছে যে, তারা নিজেরাই বলছেন শ্রীলংকার মতো গণভবন দখল করে নিবে জনগণ এবং সাধারণ ছাত্রছাত্রীরা। সেই ভয়ে তারা আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী তথা রাষ্ট্রের সকল সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানকে অপব্যবহার করে নিজেদের রক্ষা করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
[৯] বিবৃতিতে বিএনপি মহাসচিব আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ প্রশাসনের কর্মকর্তা, কর্মচারীদের প্রতি সরকারের অন্যায় ও বেআইনি হুকুম, আদেশ, নির্দেশ, চাপ উপেক্ষা করে ছাত্র-জনতার বিরুদ্ধে দমন-নিপীড়ন থেকে বিরত থাকার আহ্বান জনিয়েছেন। তিনি বলেন, সরকার সুপরিকল্পিতভাবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও প্রশাসনকে ছাত্র জনতার বিপক্ষে দাঁড় করাচ্ছে, যা রাষ্ট্রের জন্য অশনি সঙ্কেত।
[১]২১ জুলাই পর্যন্ত সকল মৃত্যুর ঘটনার তদন্ত করবেন তিন বিচারপতির কমিশন
ইকবাল খান: [২] কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে ১৬ জুলাই থেকে ২১ জুলাই পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন স্থানে সংঘটিত ঘটনায় মৃত্যু, সহিংসতা, নাশকতা, অগ্নিসংযোগ, লুটপাট, সন্ত্রাসী কর্মকান্ড ও ক্ষয়ক্ষতির ঘটনা তদন্তে হাইকোর্ট বিভাগের তিন বিচারপতির সমন্বয়ে তদন্ত কমিশন গঠন করেছে সরকার। সূত্র: বাসস
[৩] বৃহস্পতিবার এ সংক্রান্ত এক প্রজ্ঞাপন জারি করেছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।
[৪] হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি খোন্দকার দিলীরুজ্জামানকে সভাপতি করে গঠিত তদন্ত কমিশনের অপর দুই সদস্য হলেন- হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি কে এম জাহিদ সারওয়ার ও বিচারপতি মোহাম্মদ শওকত আলী চৌধুরী।
[৫] তদন্ত কাজ শেষ করে আগামী ৪৫ কার্যদিবসের মধ্যে সরকারের কাছে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করবে বলে প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়েছে।
[৬] প্রজ্ঞাপনে কমিশনের কার্যপরিধি উল্লেখ করে বলা হয়েছে, ‘গত ১৬ জুলাই, ২০২৪ তারিখ হইতে ২১ জুলাই, ২০২৪ তারিখ পর্যন্ত সময়ে নিহত ব্যক্তিগণের মৃত্যুর কারণ উদঘাটন ও তাহাদের মৃত্যুর জন্য দায়ী ব্যক্তিবর্গকে চিহ্নিতকরণ; গত ১৬ জুলাই, ২০২৪ তারিখ হইতে ২১ জুলাই, ২০১৪ তারিখ পর্যন্ত সময়ে সংঘটিত সহিংসতা, নাশকতা, অগ্নিসংযোগ, লুটপাট ও সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের জন্য দায়ী ব্যক্তিবর্গকে চিহ্নিতকরণ; এবং গত ১৬ জুলাই, ২০২৪ তারিখ হইতে ২১ জুলাই, ২০২৪ তারিখ পর্যন্ত সময়ে সংঘটিত সহিংসতা, নাশকতা, অগ্নিসংযোগ, লুটপাট ও সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের ঘটনায় বিভিন্ন সরকারি, আধা-সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত দপ্তর বা সংস্থা, প্রতিষ্ঠান, সরকারি কোম্পানি, সংবিধিবদ্ধ কর্তৃপক্ষ ও কর্পোরেশন এবং বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সম্পত্তির ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ।’
[১]বিনা কারণে আটক সকলকে ছেড়ে দিতে ২৪ ঘণ্টার আলটিমেটাম ‘বিক্ষুব্ধ’ নাগরিক সমাজের
মাসুদ আলম: [২.১] কোটা সংস্কার আন্দোলনের ছয় সমন্বয়ককে শুধু নয়, ঢাকাসহ সারাদেশে আটক সকল শিক্ষার্থী ও সাধারণ নাগরিক যাদের বিনা কারণে আটক করা হয়েছে তাদেরকে ছেড়ে দিতে এই আলটিমেটাম দিয়েছে ‘বিক্ষুব্ধ’ নাগরিক সমাজ।
[২.২] ডিবি হেফাজতে থাকা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ছয় সমন্বয়ক যাতে স্বাধীন পরিবেশে, স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারেন, তা নিশ্চিত করতে হবে।
[৩] বৃহস্পতিবার বিকেলে রাজধানীর মিন্টো রোডের ডিবি কার্যালয়ের সামনে এক মানববন্ধন থেকে এই দাবি জানায় ‘বিক্ষুব্ধ. নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা।
[৪.১] অর্থনীতিবিদ ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, আগামী ২৪ ঘণ্টার ভেতরে ঢাকাসহ সারাদেশে আটক ছাত্র-শিক্ষক, সাধারণ মানুষ বিনা বিচারে আটক ও আইনানুগ ব্যবস্থা ছাড়া আটকদের অনতিবিলম্বে মুক্তি দিতে হবে। এটা হচ্ছে আমাদের প্রধান দাবি।
[৪.২] গুলি করে শিশুসহ নির্বিচারে মানুষ হত্যার তদন্ত জাতিসংঘের অধীনে করতে হবে।
[৫.১] ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ডিবিসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সকল প্রতিষ্ঠান মিথ্যাচার, প্রতারণার আশ্রয় নিয়েছে। প্রতিটি ফোর্সই প্রতিটি বিষয়ে জনগণকে মূর্খ মনে করেছে।
[৫.২] প্রতিটি কথায় তারা নিজেরাই মূর্খের পরিচয় দিয়েছে, সেটা তারা ভুলে গেছে। মিথ্যাচার করে সরকার পরিচালনা, রাষ্ট্র পরিচালনা থেকে সরে আসতে হবে। মিথ্যাচার দেশবাসী বুঝে গেছে।
[৬] ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল বলেন, আমাদের সকল শিক্ষার্থীকে যদি ছেড়ে দেওয়া না হয়, যদি হত্যার বিচার করা না হয়, যদি অবিলম্বে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া না হয় তাহলে কঠোর ও অব্যাহত কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।
[৭] বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, আমরা আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টি’র পুলিশ চাই না। আমরা বাংলাদেশের পুলিশ চাই। আপনার (পুলিশ) জনগণের জন্য কাজ করবেন। বাংলাদেশের পুলিশ হবেন।
[৮] মানববন্ধনে অংশ নেয় অর্থনীতিবিদ মোস্তাফিজুর রহমান, অ্যাসোসিয়েশন ফর ল্যান্ড রিফর্ম ইন বাংলাদেশের (এএলআরডি) নির্বাহী পরিচালক শামসুল হুদা, প্রয়াত ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর স্ত্রী শিরীন হক, বাংলাদেশের বেসরকারি সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন ফর ল্যান্ড রিফর্ম ইন বাংলাদেশের (এএলআরডি) নির্বাহী পরিচালক শামসুল হুদা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক ড. গীতি আরা নাসরীন প্রমুখ। সম্পাদনা: সমর চক্রবর্তী