শরীফ শাওন: টানা দুদিন বৃষ্টি না থাকায় দেশের বন্যাকবলিত অঞ্চলগুলো থেকে পানি নামতে শুরু করেছে। বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হলেও দুর্ভোগ কমেনি বানভাসি মানুষের। বসবাসের অনুপযোগী হওয়ায় অনেকেই নতুন করে আশ্রয়স্থলে অবস্থান নিচ্ছেন। আশ্রয়কেন্দ্রের অভাবে সড়কেও আশ্রয় নিচ্ছেন হাজার হাজার মানুষ। বিশুদ্ধ পানি ও খাবার সংকটে অনেকেই দিন কাটাচ্ছেন অর্ধাহার বা অনাহারে।
সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি নূর উদ্দীন জানান, বন্যার পানি খুব ধীরগতিতে নামার কারণে বন্যাকবলিত মানুষ এখনই বাড়িতে ফিরতে পারছে না। সুনামগঞ্জে সড়ক বা আশ্রয়কেন্দ্রে সবখানেই দুর্বিষহ জীবন পার করছে বানভাসি মানুষ। আশ্রয় কেন্দ্রে জায়গার অভাবে সড়কে আশ্রয় নিয়েছে হাজার হাজার মানুষ।
হবিগঞ্জের আশ্রয়কেন্দ্রেও বাড়ছে বন্যার্তদের ভিড়। এ জেলার প্রধান নদীগুলোর পানি কমতে থাকলেও হাওরের পানি না কমায় বন্যাকবলিত মানুষের সংখ্যা আরও বেড়েছে। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত এ জেলার সাতটি উপজেলায় ৫৪টি ইউনিয়ন বন্যাকবলিত হয়েছে। এদের মধ্যে ২১ হাজার ৪১৯ জন মানুষ ৩৫৪টি বন্যা আশ্রয়কেন্দ্রে গিয়ে উঠেছেন।
জেলা প্রশাসনের হিসাবে, বন্যার পানিতে ১৬ হাজার ৩৬৮ হেক্টর আউশ, ১৪ হাজার ৬৬০ হেক্টর বোনা আমন, এক হাজার ৯১৫ হেক্টর জমির শাকসবজি এবং ৫০ হেক্টর অন্যান্য জমির ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কুড়িগ্রামের উঁচু এলাকার ঘর-বাড়ি থেকে পানি নেমে গেলেও কিছু চরাঞ্চলসহ নীচু এলাকার ঘর-বাড়িতে এখনও জমে আছে বন্যার পানি। এ অবস্থায় রান্না করা খাবার, বিশুদ্ধ পানি, গো-খাদ্য সহ নানা সংকটের পাশাপাশি এসব এলাকায় দেখা দিয়েছে পানিবাহিত রোগের প্রাদুর্ভাব। অধিকাংশ শিশু ডায়রিয়ায় আক্রান্ত, অনেকের হাতে ও পায়ে ঘা দেখা দিয়েছে।
সিলেট জেলা প্রশাসনের সহকারী কমিশনার আহসানুল আলম জানান, বন্যায় সিটি করপোরেশনের আংশিক এলাকা, জেলার ১৩টি উপজেলা ও ৫টি পৌরসভা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে ৯৯টি ইউনিয়নের ৪ লাখ ১৬ হাজার ৮১৯টি পরিবারের ২১ লাখ ৮৭ হাজার ২৩২ জন সদস্য ক্ষতির মুখে পড়েছেন। তিনি জানান, ২২ হাজার ৪৫০টি ঘরবাড়ি বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ২৮ হাজার ৯৪৫ হেক্টর জমির ফসল পড়েছে ক্ষতির মুখে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন ও কন্ট্রোল রুম জানিয়েছে, পানিতে ডুবে, বজ্রপাত ও সাপের কামড়ে একদিনে আরও ২ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে বন্যায় মোট মৃতের সংখ্যা দাড়িয়েছে ৮৪ জনে। সম্পাদনা: সালেহ্ বিপ্লব